অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়ে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল কুড়মি নেতাকে।— ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্লিনচিট সত্ত্বেও কুড়মি নেতা রাজেশ মাহাতো-সহ চার জনকে গ্রেফতার করল ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। এর আগে গত শুক্রবার তাঁকে পাঠানো হয়েছিল বদলির নোটিস। ঘটনাচক্রে, সে রাতেই হামলা হয় অভিষেকের কনভয়ে। যদিও ওই ঘটনা নিয়ে শালবনি থেকে মমতা জানিয়ে দেন, শুক্রবার অভিষেকের কনভয়ে কুড়মিরা হামলা করেনি। করেছে বিজেপি। তার আগে অভিষেক দাবি করেছিলেন যে, কুড়মিদের বিক্ষোভে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন তিনি। এর পর মমতা বলেছিলেন, ‘‘কুড়মি ভাইয়েরা এ কাজ করে না। করেছে বিজেপি।’’
ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি রাজেশ, আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি শিবাজি মাহাতো-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে ঝাড়গ্রামের এসডিপিও অনিন্দ্য সুন্দর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ রবিবার ধৃতদের তোলা হয়েছিল ঝাড়গ্রাম আদালতে। তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে ২৯ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অন্য দিকে পুলিশ হেফাজতে থাকা চার জনকেও রবিবার হাজির করানো হয় আদালতে। তাঁদেরও ২৯ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে কুড়মি সমাজ। আদালত থেকে বেরনোর পথে রাজেশের হুঁশিয়ারি, ‘‘সাংবিধানিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এই লড়াই চলবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেকের কনভয়ে হামলা এবং রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছিল আরও চার জনকে। তাঁদের তিন দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। ওই কাণ্ডে শনিবার রাজেশকে প্রাথমিক ভাবে আটক করে পুলিশ। এফআইআরে যে ১৫ জনের নাম ছিল রাজেশ তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
রাজেশ পেশায় স্কুলশিক্ষক। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের বনপুর হাই স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক। শুক্রবার তাঁকে কোচবিহারের চামতা আদর্শ হাই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে বদলির নোটিস পাঠানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাঁকে বর্তমান স্কুল ছাড়তে হবে। তার পর নতুন স্কুলে যোগ দিতে হবে তিন দিনের মধ্যে।
রাজেশের গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি বিশিষ্ট শিক্ষক। অত্যন্ত প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তাঁর সামাজিক আন্দোলন নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। এই সমস্যা তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দিকে জনজাতিদের উস্কে দিচ্ছেন। অন্য দিকে কুড়মিদের উস্কে দিচ্ছেন।’’
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে। ঝাড়গ্রাম শহরে ‘নবজোয়ার কর্মসূচি’র ‘রোড শো’ শেষ করে লোধাশুলি হয়ে অভিষেকের কনভয় শালবনির দিকে যাচ্ছিল। সেই যাত্রাপথে ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের দু’ধারে তখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ, অভিষেকের কনভয়ের উদ্দেশে ‘চোর চোর’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়। এর পর ওই কনভয়ের শেষে থাকা মন্ত্রী বিরবাহার গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। মন্ত্রীর গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায় তাতে। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, দলীয় কর্মীদের বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারা হয়। ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েক জন। এই ঘটনার পর রাজেশ-সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy