অসহায়: স্কুলে র্যাম্প নেই। তাই কোলে চেপেই পরীক্ষা হল থেকে বেরোতে হচ্ছে বাবুসোনা সেনাপতিকে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কয়েক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক সমিতির কাছ থেকে একটি হুইলচেয়ার পেয়েছেন বামনগাছির রামকৃষ্ণ পল্লির পরীক্ষার্থী বাবুসোনা সেনাপতি। তাঁর দু’টি পা পোলিয়োয় আক্রান্ত। হাঁটতে পারেন না। নতুন হুইলচেয়ার চালিয়ে বাড়িতে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে তাঁর কিছুটা সুবিধা হলেও পরীক্ষার হলে ঢুকতে তাঁকে সেই বাবার কাঁধেই চড়তে হচ্ছে। কারণ যে-স্কুলে তাঁর সিট পড়েছে, সেখানে হুইলচেয়ার চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামো নেই। অগত্যা বাবার কাঁধই ভরসা।
অভিযোগ, শুধু বাবুসোনার কেন্দ্রে নয়, অধিকাংশ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রেই প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের পরীক্ষা দেওয়ার পরিকাঠামো নেই। শহর ও জেলা, সর্বত্র একই হাল। হুইলচেয়ার নিয়ে যাওয়ার জন্য র্যাম্প নেই। রেলিং নেই। প্রতিবন্ধীদের জন্য শৌচালয় নেই বেশির ভাগ স্কুলেই।
তবে বাবুসোনা যে-স্কুলে পরীক্ষা দিচ্ছেন, সেখানকার প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ওই প্রতিবন্ধী ছাত্রের জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, আমরা তা নিচ্ছি। দোতলায় সিট পড়লেও আমরা একতলায় ওর বসার ব্যবস্থা করছি।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের পরীক্ষার্থিনী হেমাঙ্গিনী সর্দার শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভাল করে হাঁটতে পারেন না। হেমাঙ্গিনী বললেন, ‘‘সিঁড়ি দিয়ে উঠে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার অসুবিধা তো আছেই। রয়েছে শৌচালয়ের সমস্যাও।’’ যে-স্কুলে ওই পরীক্ষার্থীর সিট পড়েছে, সেখানকার প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ওই পরীক্ষার্থী আমাদের অসুবিধার কথা কিছু জানায়নি। পরের পরীক্ষা থেকেই প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করবো।’’
কারজুনগর স্বর্ণময়ী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কাজি মাসুম আখতার জানান, কলকাতার বেশির ভাগ স্কুলে প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। ফলে প্রতিবন্ধীদের পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হচ্ছে। ‘‘তবে আমরা সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও র্যাম্পের ব্যবস্থা করেছি,’’ দাবি মাসুম আখতারের।
রাজ্য জুড়ে প্রতিবন্ধীদের দাবিদাওয়া নিয়ে লড়ছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী। ওই সংগঠনের সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইনেই আছে স্কুলগুলিতে র্যাম্প, রেলিং এবং আলাদা শৌচালয় থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশির ভাগ পরীক্ষা কেন্দ্রেই তা নেই। এমনকি অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী পড়ুয়াকে দোতলা বা তেতলায় উঠে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।’’
অধিকাংশ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামো না-থাকায় সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলিও। এই ধরনেরই এক সংগঠনের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন ‘‘পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচনের সময় সংশ্লিষ্ট স্কুলে ন্যূনতম পরিকাঠামো আছে কি না, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে তা খতিয়ে দেখার সময় র্যাম্পের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। ’’
স্কুলে র্যাম্পের অভাবের কথা মানতে রাজি নন স্কুলশিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। ‘‘বেশির ভাগ স্কুলেই র্যাম্প আছে। যে-সব স্কুলে ভোটকেন্দ্র হয়, সেখানে র্যাম্প রয়েছে,’’ দাবি ওই দফতরের এক আধিকারিকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy