Advertisement
০২ মে ২০২৪
trekking

Lamkhaga Pass: পাহাড়ের খাঁজে ৮ মাস, কফিনে ফিরছেন সুখেন

ছেলের নাম শুনে কলতলার কাজ ফেলে কণ্ঠস্বরে উৎকণ্ঠা আর প্রশ্ন ভরে উঠে এলেন বৃদ্ধা ছায়াদেবী। ঘনায়মান মেঘের কথা তখনও জানেন না তিনিও।

তখনও সুখেনের মৃত্যুসংবাদ পাননি তাঁর মা ও ছেলে। রবিবার।

তখনও সুখেনের মৃত্যুসংবাদ পাননি তাঁর মা ও ছেলে। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ০৬:৪৯
Share: Save:

আষাঢ়ের মেঘলা দুপুর। তাদের জীবনেও যে ঘনিয়ে এসেছে আরও ঘন কালো মেঘ, তা না-জেনেই বাড়ির উঠোনে একলা খেলছিল বছর বারোর ছেলেটি। কলতলায় কাজ করছিলেন ঠাকুরমা। গেট ঠেলে ঢুকে এটা সুখেন মাঝির বাড়ি কি না, জিজ্ঞেস করতেই বালক বলল, ‘‘হ্যাঁ, এটা সুখেন মাঝির বাড়ি। কিন্তু বাবা বাড়ি নেই। বাবা পাহাড়ে কোথাও আটকে আছে।’’

ছেলের নাম শুনে কলতলার কাজ ফেলে কণ্ঠস্বরে উৎকণ্ঠা আর প্রশ্ন ভরে উঠে এলেন বৃদ্ধা ছায়াদেবী। ঘনায়মান মেঘের কথা তখনও জানেন না তিনিও। বললেন, “সুখেনের কোনও খবর পেলেন? আমরা এখনও পাইনি।’’ তার পরেই হাঁক দিলেন তাঁর বৌমা, সুখেনবাবুর স্ত্রী লাবণীদেবীর নাম ধরে। লাবণীদেবী ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ছায়াদেবী বললেন, ‘‘ছেলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বোধ হয়। এঁরা এসেছেন।’’

রবিবার বেলা ৩টে। কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর-কবরডাঙা পেরিয়ে নেপালগঞ্জের খালপাড়ের বাড়ির এই তিন সদস্য তখনও জানতেন না, ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর হিমাচল প্রদেশের লামখাগা পাসে ট্রেকিং করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সুখেনবাবুর দেহ পাওয়া গিয়েছে শনিবার। বিডিও অফিসে গিয়ে সদ্য খবরটা পেয়েছেন শুধু সুখেনবাবুর ভাই শুভেন্দুবাবু।

শুভেন্দুবাবু তখন বাড়ি ছিলেন না। বাড়ি ফিরে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘‘হিমাচলের এক পুলিশ আধিকারিক আমাকে ভিডিয়ো কলে দাদার ছবি দেখিয়েছেন। দাদার জামাকাপড় দেখে চিনতে পেরেছি। দাদার দেহ আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ তার পরেই তাঁর কাতর আবেদন, ‘‘দয়া করে এখনই মা-বৌদিকে কিছু বলবেন না। আমি ওদের দাদার মৃত্যুসংবাদ দিতে পারব না। দিদি আসছে। দিদিই ওদের যা বলার বলবে।’’

২০২১ সালের ১২ অক্টোবর হিমাচলে ট্রেকিংয়ে গিয়ে দুর্যোগের মধ্যে পড়েন বিকাশ মাকাল, তনুময় তিওয়ারি, সৌরভ মণ্ডল, রিচার্ড মণ্ডল, শুভময় দাস, মিঠুন মাঝি ও সুখেনবাবু। বেঁচে যান শুধু মিঠুনবাবু। বাকিদের দেহ পাওয়া গেলেও সুখেনবাবুর দেহ তখন পাওয়া যায়নি।

কেটে গিয়েছে আটটা মাস। স্বামী বেঁচে নেই, এমন আশঙ্কা থাকলেও মনের কোণে আশার আলো রয়ে গিয়েছে, জানালেন লাবণীদেবী। (মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার আগে) বললেন, ‘‘কয়েক মাস কী যন্ত্রণার মধ্যে যে দিন কাটাচ্ছি! ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদতেও পারি না। কত কিছুই তো অলৌকিক ঘটে।’’ ছেলে অ্যাড্রিয়ান স্থানীয় সেন্ট স্টিফেন্স স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। (দুঃসংবাদ পাওয়ার আগে) ছায়াদেবী বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই তো বেরিয়ে পড়ত। বেড়াতে গেলে যেত পরিবার নিয়ে। আর ট্রেকিংয়ে গেলে নিজেদের একটা দল ছিল। বয়স বিয়াল্লিশ, স্বাস্থ্য খুব ভাল। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যেস। বাড়িতে কত কাজ বাকি! ছেলে ফিরলে তবে তো হবে।’’ মা-বৌদি-ভাইপোর সামনে চোখের জল আটকে অভিনয় করে গেলেও তাঁদের আড়ালে অশ্রু বাধা মানছে না শুভেন্দুবাবুর। বাড়ির বাইরে রাস্তায় ছলছল চোখে বললেন, “বাবার মৃত্যুর সময় একাদশ শ্রেণিতে পড়তাম। তখন থেকে দাদাই আমার ছাতা।’’

হিমাচলে ট্রেকিংয়ে গিয়ে ফেরার পথে পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জনের সাত অভিযাত্রী লামখাগা পাসে বরফের মধ্যে পড়ে থাকা একটি পিঠব্যাগ খুলে বিকাশ মাকালের ভোটার কার্ড পান। বিকাশবাবু যে ২০২১ সালের অক্টোবরে এখানে ট্রেকিংয়ে এসে মারা যান, তা জানতেন ওই অভিযাত্রীরা। ওই দলের ক্যাপ্টেন রঞ্জন দত্ত জানান, তাঁরা আরও তিনটি রুকস্যাক পেয়েছেন। সেগুলি মৃত অভিযাত্রীদের পরিবারকে ফিরিয়ে দিতে চান তাঁরা।

খবর পেয়ে ওখানে নজরদারি বাড়ায় ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি)। তারা জানায়, শুক্রবার লামখাগায় একটি মৃতদেহ দেখা যায়। শনিবার সকালে সেটি উদ্ধার করা হয়। সেটিই যে সুখেনবাবুর দেহ, নিশ্চিত হওয়ার পরে খবর যায় পশ্চিমবঙ্গে। মৃতদেহের সঙ্গে ক্যামেরা, টাকা, অন্য কিছু জিনিসও পাওয়া গিয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত রবিবার বলেন, ‘‘মৃতদেহ যত দ্রুত সম্ভব আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লকের বিডিও সুবীর দণ্ডপাট বলেন, ‘‘মৃতদেহ কলকাতায় আনার উদ্যোগ চলছে। পরিবারকে প্রশাসনিক স্তরে সাহা‌য্য করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

trekking Himachal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE