Advertisement
২১ মে ২০২৪
West Bengal Ration Distribution Case

সাক্ষী কেন গোপন রাখা হচ্ছে? প্রশ্ন তুললেন ‘ডাকু-ঘনিষ্ঠ’ বিশ্বজিৎ, কোর্টে ব্যাখ্যা দিল ইডি

বিশ্বজিতের আইনজীবী এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অর্থ তছরুপ আইন (পিএমএলএ)-এ সাক্ষীদের নাম গোপনের কথা বলা নেই। তা হলে তা কেন করা হল? এটা বেআইনি।

image of biswajit das

ইডির হাতে ধৃত বিশ্বজিৎ দাস। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৪
Share: Save:

রেশন দুর্নীতি মামলায় সাক্ষীদের নাম নেই। ‘পি১, পি২’ বলে লেখা। তাঁদের কথা কেন মেনে নেওয়া হবে? শুক্রবার আদালতে প্রশ্ন তুলল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র হাতে ধৃত বিশ্বজিৎ দাসের আইনজীবী। ইডি পাল্টা দাবি করল, বয়ান দিয়েও প্রত্যাহার করছেন সাক্ষীরা। সে কারণে, বাধ্য হয়ে ছদ্মনামের আড়ালে গোপন রাখা হচ্ছে পরিচয়। ইডি সূত্রে খবর, রেশন দুর্নীতির কালো টাকা সোনায় পরিণত করে সাদা করা হয়েছে। শুক্রবার আদালত থেকে বেরিয়ে এই কথা খারিজ করেন বিশ্বজিৎ। তিনি দাবি করেন, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের টাকা তিনি বিদেশে পাঠাননি। উল্টে বিদেশ থেকে তাঁর টাকা এসেছে ব্যবসার জন্য।

শুক্রবার নিম্ন আদালতে বিশ্বজিতের আইনজীবী শ্যামল ঘোষ মক্কেলের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সাক্ষীদের নাম গোপন রাখার প্রসঙ্গও তুলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘এই ভাবে পি১, পি২ করে যে যা বলবেন, তাই কি বিশ্বাস করে নেওয়া হবে? তাঁর বক্তব্য যাচাই করতে হবে তো!’’ তিনি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অর্থ তছরুপ আইন (পিএমএলএ)-এ সাক্ষীদের নাম গোপনের কথা বলা নেই। তা হলে তা কেন করা হল? এটা বেআইনি। ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘আমরা রিমান্ডে যার নাম খোলসা করছি, কিছু দিন পর সেই সাক্ষী তার বয়ান প্রত্যাহার করতে চাইছেন। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি। ছদ্মনামের আড়ালে আসল নাম লুকানো হচ্ছে। আপস করা হয়ে যাচ্ছে।’’ জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ইডি।

আদালতে বিশ্বজিতের আইনজীবী এ-ও দাবি করেন, তাঁর মক্কেলের গ্রেফতারি বেআইনি। বিশ্বজিতের গ্রেফতারির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গ্রেফতারির সময় ‘রিজন টু বিলিভ’ অর্থাৎ যে ধারণার ভিত্তিতে তদন্তকারী অফিসার ধারা আরোপ করেন, তা নেই। তিনি জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী আমদানি-রফতানির ব্যবসায় বাংলাদেশের টাকা আরব আমিরশাহি হয়ে আসে। ২০০০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত শঙ্করের কর্মচারী ছিলেন বিশ্বজিৎ। তার পর ছেড়ে দিয়েছেন। তা হলে কী ভাবে বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের সঙ্গে যুক্ত হলেন তাঁর মক্কেল। প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী। তাঁর মাধ্যমে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘আমি ফরেক্স (বিদেশ মুদ্রা)-র ব্যবসা করি। এই ব্যবসায় আরবিআইয়ের নজর থাকে। তা হলে কেন আমার নাম রেশন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। ওঁকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া উচিত এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।’’ ইডির আইনজীবী দাবি করেছেন, তল্লাশিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা খালি হাতে ফেরেনি। বিশ্বজিৎকে আট দিনের হেফাজতে চেয়েছে তারা। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁকে ইডি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।

ইডির দাবি, রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)-এর টাকা শঙ্করকে পৌঁছে দিতেন বিশ্বজিৎ। শঙ্করের কাছে বালুর যে টাকা পৌঁছত, তা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় বদলে ফেলা হত। পাচার করে দেওয়া হত দুবাইয়ে। সেই কাজেও প্রত্যক্ষ ভাবে সহযোগিতা করতেন বিশ্বজিৎ। ইডি দাবি করেছে, বালুর যে ২০০০ কোটি টাকা শঙ্করের মাধ্যমে দুবাই পাঠানো হয়েছে, সেই টাকার একটা অংশ দুবাইয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। তবে ইডির হাতে ধৃত বিশ্বজিতের দাবি, তাঁকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি কোনও রাজনৈতিক নেতা নন, এক জন ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার বিশ্বজিৎকে রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় গ্রেফতার করে ইডি। সল্টলেক থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তিনি ওই একই মামলায় ধৃত শঙ্কর ওরফে ডাকুর ঘনিষ্ঠ বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Ration Distribution Case ED
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE