Advertisement
০২ মে ২০২৪
TMC

TMC: ঠিকাদারি ছাড়লে করব কী, স্ত্রীর শাড়ি কিনতেও বাবার কাছে হাত পাতব? প্রশ্ন তৃণমূল নেতার

​​​​​​​আঠাশ বছর আগে দীপক মাজি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একটি ওষুধ প্রস্তুতকার সংস্থায়। বছর কয়েকের মধ্যে সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়।

দীপক মাজি ।

দীপক মাজি । ছবি সঞ্জীব ঘোষ।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২২ ০৬:০৪
Share: Save:

দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। গ্রামীণ নেতা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন।আঠাশ বছর আগে দীপক মাজি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একটি ওষুধ প্রস্তুতকার সংস্থায়। বছর কয়েকের মধ্যে সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে শুরু করলেন তরমুজের ব্যবসা। চলেনি। তৃতীয় উদ্যোগ— আলু-তিল ইত্যাদি ফসলের মরসুমি ব্যবসা। এ ক্ষেত্রেও সাফল্য আসেনি। হুগলির আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান শিক্ষা-সংস্কৃতি-তথ্য ও ক্রীড়া স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূল নেতা দীপক এখন সগর্বে দাবি করছেন, ২০১৬-তে স্ত্রী নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে কাজ শুরু করার পর থেকে থিতু হতে পেরেছেন। বছরে ২৫-৩০ লক্ষ টাকার কাজ করছেন। ১০ শতাংশ লাভ থাকছে। তাতেই সংসার চলে। না হলে কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে পাওয়া মাসিক পাঁচ হাজার টাকার সাম্মানিকে আর কী হয়? প্রশ্ন দীপকের। কিন্তু দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত শনিবারই হলদিয়ায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘শ্রমিকদের মুখের গ্রাস কাড়া চলবে না। হয় ঠিকাদারি করুন, না হয় তৃণমূল। দু’টো একসঙ্গে নয়।’’ কী করবেন দীপক?

পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন মধ্য পঞ্চাশের ওই তৃণমূল নেতা, ‘‘ঠিকাদারি ছাড়লে আমার ছেলেমেয়েটা খেতে না পেয়ে কি থালা বাজাবে? নাকি বৌয়ের কাপড় কিনতেও বাবার কাছে হাত পাততে হবে?” তিনি আরও বলেন, ‘‘দল যদি মনে করে আমাকে টিকিট দেওয়া যাবে না, মেনে নেব। একান্তই ঠিকাদারি ছাড়তে হলে দলকেও আমার কথাও ভাবতে হবে।’’ অবশ্য একইসঙ্গে দীপক মনে করেন, “হলদিয়ার মতো জায়গায় অভিষেক ঠিক কথাই বলেছেন। ভাল সিদ্ধান্ত। এটা আরও আগে বলা হলে ভাল হত।’’

অভিষেকের হুঁশিয়ারির পরে এ নিয়ে এখনও কোনও পদক্ষেপ শুরু করেননি দলের জেলা নেতৃত্ব। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘দলের নেতা (অভিষেক) ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বলেছেন। সেই প্রক্রিয়া দ্রুত চালুও হবে।’’

নিজের সংসদ এলাকা সালেপুর-১ পঞ্চায়েতের আদিবাসী গ্রাম পার্বতীচকে ৪৬টি শৌচাগার নির্মাণ করে ঠিকাদারি কাজের সূচনা করেন দীপক। তাঁর দাবি, “ওই কাজ জেলা প্রশাসন থেকে নির্দিষ্ট সময়ে করার নির্দেশ থাকায় পেশাদার ঠিকাদররা কেউ নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। তখন নিজের স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে কাজটা করি। তারপর থেকে আর কাজ পেতে অসুবিধা হয়নি।’’

সালেপুর-১ পঞ্চায়েতের রামনগরে পৈতৃক বাড়িতেই বাস করেন দীপক। ওই পঞ্চায়েত ও সংলগ্ন গৌরহাটি-২ পঞ্চায়েত এলাকাতেই বেশি কাজ করেন দীপক। এ বাদেও পঞ্চায়েত সমিতির কিছু কাজও করেন। দুই পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ কাজই ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে। সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকার কিছু কাজ আছে।

ঠিকাদারি কাজ করে দীপকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে— এমন দাবি কোনও গ্রামবাসীই করেননি। বরং, তাঁরা জানিয়েছেন, যে কোনও সঙ্কটে দীপকের সহযোগিতা মেলে। তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করে টাকা চাওয়ার অভিযোগও শোনা যায়নি।

তবে, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের পেশাদার ঠিকাদারদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে কাজ আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন। তেমনই এক ঠিকাদার বলেন, ‘‘হয়তো ১০টি কাজ বের হল। তার মধ্যে বড় টাকার অঙ্কের কাজটা দীপকবাবু করবেন বলে জানিয়ে দেন। তিনি ভয়ভীতি না দেখালেও সেই কাজটা বাদ রেখে বাকি কাজ পেতে দরপত্রের প্রতিযোগিতা চালাতে হয় আমাদের।”

অভিযোগ মানেননি দীপক। তাঁর দাবি, ‘‘প্রভাব খাটানো তো দূর, আমি সারা বছরে ২৫-৩০ লক্ষ টাকার কাজ হয়ে গেলে আর দরপত্রে অংশগ্রহণই করি না। নইলে যদি সব ক’টি পঞ্চায়েতে গিয়ে কাজ চাইতাম, পেতাম না কি? সপরিবার খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য সৎ ভাবে আয় করছি। আমার যে কোনও কাজের মান পরীক্ষা নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতেও রাজি আছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

TMC leader Abhishek Banerjee contractor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE