কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
সরকারি চাকরিতে এ এক উলটপুরাণ!
সরকারের বিভিন্ন দফতরে চাকুরিরত কর্মী-আধিকারিকেরা মনেপ্রাণে চান, কর্মজীবনে তাঁদের পদোন্নতি হোক। কিন্তু, কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল অফিসারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সেই পদোন্নতিই চাইছেন না! নিয়ম মতো, মেডিক্যাল অফিসার থেকে উন্নীত হয়ে ওই আধিকারিকদের এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসার হওয়ার কথা। কলকাতা পুরসভার ১৬টি বরোর প্রতিটিতে এক জন করে এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসার থাকার কথা। কিন্তু, বর্তমানে সব মিলিয়ে আছেন মাত্র ছ’জন। যে সব বরোয় এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসার নেই, সেখানে মেডিক্যাল অফিসার ইন-চার্জ (এমওআইসি) পদ তৈরি করে তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এতে সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। মেডিক্যাল অফিসার ইন-চার্জ পদটি এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসারের সমতুল বলে পুর প্রশাসন দাবি করলেও পুর স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক কাজে নানা ধরনের বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। বেশির ভাগ বরোয় এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসার না থাকায় পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে নজরদারির খামতি থেকে যাচ্ছে। অভিযোগ, অধিকাংশ পুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সময় মতো চিকিৎসক আসেন না। বহু জায়গায় রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট ও নার্সরা। কোথাও বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। পুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, গত এক বছরে পদোন্নতি হয়েছে প্রায় ২০ জন মেডিক্যাল অফিসারের। কিন্তু তাঁরা কেউই এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসার হতে চাইছেন না।
কেন পদোন্নতিতে অনীহা পুরসভার মেডিক্যাল অফিসারদের?
পুর স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। যার অন্যতম, পুরসভার এক জন এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসারকে তাঁর বরো এলাকার সমস্ত হিসাবনিকাশের দায়িত্বও সামলাতে হয়। উদাহরণস্বরূপ এক পুর আধিকারিক বলছেন, ‘‘বরোর এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসারকে তাঁর এলাকার শ্মশান, কসাইখানার হিসাবপত্র দেখতে হয়। যেমন, এখন শ্মশানে মৃত ব্যক্তিদের পরিজনদের ‘সমব্যথী’ প্রকল্পে নগদ টাকা দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে বছরে লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকা।’’ ওই আধিকারিক জানাচ্ছেন, এই সমস্ত হিসাবনিকাশ যুক্ত করা হয় এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসারের ব্যক্তিগত প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঙ্গে। অবসরের সময়ে ওই হিসাব না মিললে সংশ্লিষ্ট অফিসার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা হাতে পাবেন না। এই নিয়মের ফাঁদে পড়ে গত বছর এক জন মেডিক্যাল অফিসার পদোন্নতি পেয়েও পদত্যাগ করেছিলেন। আবার এমনও হয়েছে, কোনও এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসারের অবসরের সময়ে বাকি যাবতীয় হিসাব মিলতে দেরি হওয়ায় তিনি অনেক পরে অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা পেয়েছেন।
পুরসভার এক এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসারের প্রশ্ন, ‘‘এই অদ্ভুত নিয়ম পাল্টানো হোক। বরোর সমস্ত হিসাবনিকাশ কেন অফিসারের ব্যক্তিগত প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হবে?’’ পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, ওই কারণ ছাড়াও অনেকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ‘চাপ’ এড়াতে এগ্জিকিউটিভ হেল্থ অফিসার হতে চাইছেন না।
এই প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলুন।’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরীকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ করলেও উত্তর আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy