Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
TMC Rally on 21st July

বিজেপি নেতাদের বাড়ি গণঘেরাও কর্মসূচি, ‘রাজনীতিক’ অভিষেকের রাশ টানলেন অভিজ্ঞ ‘প্রশাসক’ মমতা

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই কর্মসূচির ক্ষেত্রে যে ‘চড়া’ মেজাজ দেখিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে কিছুটা লাগাম টানেন। অনেকের মতে, মমতা ‘প্রশাসক’ হিসাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েছেন।

Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ১৮:৫২
Share: Save:

চড়া মেজাজের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন ‘রাজনীতিক’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে খানিকটা রাশ টানলেন ‘প্রশাসক’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ভাষণ দিতে গিয়ে। মমতা তা সংশোধন করে দিলেন সেই মঞ্চ থেকেই বক্তৃতার সময়। প্রকাশ্যেই।

আগামী ৫ অগস্ট, শনিবার বাংলায় বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। শুক্রবার ধর্মতলার সভা থেকে জোড়া সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তার প্রথমটি হল, ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে ২ অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীতে দিল্লি অভিযান। দ্বিতীয়, কেন্দ্রীয় ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে ৫ অগস্ট রাজ্যের বুথে বুথে, ব্লকে ব্লকে, জেলায় জেলায় বিজেপি নেতাদের বাড়ি গণঘেরাও। যা প্রকারে যথেষ্টই ‘আগ্রাসী’। দ্বিতীয় কর্মসূচির নকশাও মঞ্চ থেকে বলে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে রাখবেন! একদম গণঘেরাও! বাড়ির কেউ বয়স্ক থাকলে তাঁকে ছেড়ে দেবেন। আর কাউকে ঢুকতেও দেবেন না, বেরোতেও দেবেন না।’’

কিন্তু অভিষেকের পরেই বক্তৃতা করতে উঠে মমতা বুঝিয়ে দেন, এতটা ‘আগ্রাসন’ কাঙ্ক্ষিত নয়। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী বলেন, ‘‘অভিষেক ৫ অগস্ট একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমি বলব, ওটা ব্লকে ব্লকে করা হোক। শান্তিপূর্ণ ঘেরাও করো। বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে। ভোটের সময় যেমন বুথের ১০০ মিটার দূরে জমায়েত করা যায়। যাতে কারও ঢুকতে-বেরোতে অসুবিধা না-হয়।’’ অভিষেকের ঘোষণায় ওই ‘সংশোধন’ করার পাশাপাশি ‘প্রতীকী’ শব্দটিও ব্যবহার করেন মমতা।

তৃণমূলের অনেকের মতে, পাঁচ দশকেরও বেশি রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার সুবাদে পোড়খাওয়া রাজনীতিক মমতা বুঝেছেন, রাজ্যের প্রতিটি বুথে যদি বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে তৃণমূলের জমায়েত, তা হলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে কর্মীদেরও মনোবল তুঙ্গে। আর সংঘর্ষ বা গন্ডগোল হলে দায় এসে পড়বে প্রশাসনের ঘাড়ে। বিজেপি উল্টে হাতে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ পেয়ে যাবে। দলনেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সেটাই রুখেছেন মমতা। তবে পাশাপাশিই তিনি এ-ও বুঝেছেন যে, অভিষেক দলকে আন্দোলনের মধ্যে রাখতে চাইছেন। কারণ, অধিকাংশ সময়েই শাসকদলের সদস্য হয়ে গেলে অনেকের আন্দোলন করার মানসিকতা থাকে না। তৃণমূল গত ১২ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে। ফলে আন্দোলন করার মানসিকতায় ভাটা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিষেক যেমন তাঁর ‘নবজোয়ার’ যাত্রায় গোটা দলকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিলেন, এ ক্ষেত্রেও তিনি তেমনই করতে চেয়েছেন। দলের অনেকের বক্তব্য, দিল্লি অভিযানের আগে কিছুটা গা ঘামাতেই ৫ অগস্টের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেই কারণে মমতা ওই কর্মসূচির ‘প্রয়োজনীয়তা’ও বুঝেছেন। তাই কর্মসূচি খানিক ‘সংশোধন’ করে দিয়েছেন তিনি।

তবে অভিষেকের দিল্লির কর্মসূচিতে পুরেোপুরি সমর্থন জানিয়েছেন মমতা। এমনকি, এমনও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ওই আন্দোলনে তিনিও অংশ নিতে পারেন। মমতার কথায়, ‘‘প্রাপ্য টাকা না দিলে, অভিষেক যা বলেছে, আমরা সকলে দিল্লি যাব। যেখানে আটকাবে, সেখান থেকেই যেন দিল্লিতে আওয়াজ যায়!’’

তৃণমূলের সাংগঠনিক বিষয় পুরোটাই এখন অভিষেকের হাতে। তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর অভিষেক দলের কর্মসূচিতে নতুন ঘরানা এনেছেন। তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে কর্মসূচি নেওয়ায় বিশ্বাস করেন না। তাঁর সব কর্মসূচির নেপথ্যেই থাকে নির্দিষ্ট ভাবনা এবং পরিকল্পনা। প্রচারেও থাকে পেশাদারি মোড়ক। ৫ অগস্টের কর্মসূচিও নির্দিষ্ট ভাবনা থেকে নেওয়া। এখন দেখার, ওই কর্মসূচির ‘মেজাজ’ কেমন হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee Mamata Banerjee Ekushe July
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE