নজরে: বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার মালদহের নারায়ণপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে বন্যার প্যাকেজ নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগেও সরব হলেন। তাঁর দাবি, বারবার অন্য রাজ্যের জন্য বানভাসি হচ্ছেন এ রাজ্যের মানুষ। এ বার বিহারের পূর্ণিয়ায় বাঁধ ভাঙায় বন্যা হয়েছে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্য সরকার বানভাসি মানুষদের পাশে আছে। বন্যায় ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজের যে ক্ষতি হয়েছে সে সব মেরামতির দায়িত্বও রাজ্য সরকার।
উত্তরবঙ্গের তিন জেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে রবিবার রাতে মালদহে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। মালদহ ও দুই দিনাজপুরের বন্যা কবলিত বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখার পর মালদহে ফিরে তিন জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘এ বার রাজ্য বর্ষা বেশি হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃষ্টির জন্য নয়, বন্যা হচ্ছে নদী বাঁধ ভাঙায়। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি ভেসেছিল ডিভিসির ছাড়া জলে। আর বিহারের পূর্ণিয়ায় একটি বাঁধ ভেঙে দেওয়ার ফলে উত্তরবঙ্গে ইটাহার, বুনিয়াদপুর ও মালদহ ডুবে গিয়েছে। বিহার ডুবলেও আমাদের ডুবতে হয়, বাংলা ডুবলেও আমাদের ডুবতে হয়। নদীর জলে বন্যা বেশি হচ্ছে, এটা কেন্দ্রের দেখা উচিত।’’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ফরাক্কায় ড্রেজিং হয় না, দুর্গাপুরে ড্রেজিং হয় না, ডিভিসির ড্রেজিং হয় না। কেন্দ্রকে বারবার বলা হয়েছে, কিন্তু কিছুই হয় না। তিনি বলেন,‘‘গরমকালে জল পাব না। বাঁধ দিয়ে জল আটকে দেওয়া হবে। আর বর্ষায় বাঁধ কেটে ডুবিয়ে দেওয়া হবে। আমি বাঁধ কেটে অন্যকে ডোবানোর পক্ষে নই। অন্যদেরও নজর রাখা উচিত।’’
আরও পড়ুন:গাড়ি ছেড়ে বন্যার্তদের পাশে মমতা
কেন্দ্রের প্যাকেজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘শুনেছি বন্যার জন্য অসমকে ২০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ দিয়েছে কেন্দ্র, গুজরাতকেও দিয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে কোনও অংশেই বন্যা কম হয়নি। কিন্তু কেন্দ্র চুপ। ক্ষতির রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠাবো। ন্যায্যটুকু পাব বলেই আশা করি।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বন্যায় যে সমস্ত ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে তা নতুন করে করে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে সরকার।
ফরাক্কা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ১৯৯৬ সালে ফরাক্কার জল নিয়ে যখন চুক্তি হয়েছিল তখন গঙ্গা, পদ্মা ভাঙন রোখা নিয়েও একটা ৭০০ কোটি টাকার প্যাকেজ হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জল ছেড়েছি কিন্তু ভাঙন ঠেকানোর কাজ হয়নি। ফরাক্কার এনটিপিসি বন্ধের মুখে। কেন্দ্রকে বারবার এ নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকেও বলে এসেছি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এসেছিলেন তাঁকেও বলেছি। কিন্তু কিছু হয়নি।’’
যাওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে এ দিন বন্যা কবলিত দক্ষিণ দিনাজপুরে ঢুকতেই পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সকালে মালদহ থেকে গাজোল হয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বুনিয়াদপুরে আসার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু ডিএম এবং এসপি বুনিয়াদপুরে পৌঁছতে পারেননি শুনে মুখ্যমন্ত্রী গাজোল-বুনিয়াদপুরের শেষ সীমানা মেহেন্দিপাড়া থেকে মালদহে ফিরে যান। সেখানে তিন জেলার প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন।
এ দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইটাহারে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে দুর্গতদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও দুর্গতরা কেউ পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলে গৌতমবাবুর সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। গৌতমবাবুর দাবি, সরকারি ত্রাণের অভাব নেই। কিন্তু স্পিডবোট ও নৌকার অভাবে বন্যা কবলিত সমস্ত জায়গায় সমানভাবে নিয়মিত ত্রিপল ও খাবার পাঠাতে দেরি হচ্ছে। তাই দুর্গতদের ক্ষোভ স্বাভাবিক।
সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য ও অনুপরতন মোহান্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy