সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঘোষণার ৫০ দিন পর প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে আরও চড়া সুরে চ্যালেঞ্জ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ তুললেন গভীর ষড়যন্ত্রের। এবং জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের পথ থেকে তিনি কিছুতেই সরে আসবেন না।
শুক্রবার নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, ‘‘তাপসকে (তৃণমূল সাংসদ অভিনেতা তাপস পাল) যে আজ গ্রেফতার করা হবে, তা আমি আগেই জানতাম। কেন হঠাৎ জেরা করার জন্য সুদীপকে (তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) ডেকে পাঠাল সিবিআই, সেটাও আমি জানি। আসলে আমরা, তৃণমূল কংগ্রেস এখন প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ, আন্দোলন করছি। তাঁর দেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমার মধ্যে মানুষের দুর্ভোগ বিন্দুমাত্র কমেনি বলে প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নামছি। তাই আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকমের যড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আজকের দিনটায় যে তাপসকে অ্যারেস্ট করা হবে, তা আমি জানতাম। আমার কাছে সিবিআই, ইডি-র কাগজ আছে। কাকে কাকে ধরবে, সব জানি আমি। কিন্তু আমাদের সোর্স আমি ডিজক্লোজ করব না। এগুলো আসলে যড়যন্ত্র। প্রতিবাদ, আন্দোলনের অস্ত্রকে ভোঁতা করতেই মোদী সরকার এ সব করছে। আমাদের চোখ, কান বন্ধ নয়। এখন পরাধীন ভারতের থেকেও খারাপ অবস্থা। মোদী চাইলে আমাদের সব সাংসদকে ধরুন। চাইলে আমাকেও গ্রেফতার করুন। সব কিছুই পিএমও এবং বিজেপি-র অফিস থেকে ঠিক করা। আমাদের সবাইকে অ্যারেস্ট করলেও কিছু যায় আসে না। প্রতিবাদ চলবেই। নোটবন্দি নিয়ে মানুষের আন্দোলন চলবেই।’’
আরও পড়ুন- চার ঘণ্টা জেরার পর গ্রেফতার তাপস পাল
সম্প্রতি সিবিআই যে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেরার জন্য ডেকেছে, তাকেও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘আমার লোককে যখন ডেকেছে, তখন সে কেন যাবে না? সে বীরের মতোই যাবে। কারণ, সে তো কিছুই করেনি। সবটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। এখনও পর্যন্ত ১১১ জন মারা গিয়েছেন। বিজেপি নেতারা ভাষণের সময় তাঁদের এক জনেরও নাম বলেননি। আমার লোককে কথা বলতে ডেকে নিয়ে গিয়ে অ্যারেস্ট করেছে। আমিও চাইলে আপনার লোককে ডেকে অ্যারেস্ট করিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমি তা করব না।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও বিজেপি নেত্রী অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের নামোল্লেখ করে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘বাবুল সুপ্রিয়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও তো রোজভ্যালির আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন অনেক বার। তাতে দোষের কী আছে?’’
৫০ দিনের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে না পারার দায়িত্ব স্বীকার করে ফের প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি জানিয়েছেন এ দিন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আপনার সময় শেষ। অগ্নিপরীক্ষায় ফেল করেছেন। ক্ষমা চেয়ে এ বার সসম্মানে বিদায় নিন। এটা একটা অ্যান্টি পুওর গভর্নমেন্ট এবং অ্যান্টি পিপল গভর্নমেন্ট। ভারতবর্ষকে আতঙ্কের দেশ বানিয়ে দিয়েছে।’’
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি-র দায়িত্ব ছিল যাঁদের গ্রেফতার করার, তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি। পেটিএম-এর মতো অভিযুক্ত কোম্পানিকে কেন প্রোমোট করছেন প্রধানমন্ত্রী? যাঁদের হাতে আমাদের কারও ভবিষ্যতই সুরক্ষিত নয়, তাঁদে্র হাতেই রয়েছে ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ে তোলার ভার। কয়েক জনের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করছেন মোদী। মোদী জাল নোট রুখতে পারেননি মোটেই। মানুষ ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার ওপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন। মোদীর এই ঘোষণা দেশে কালো টাকার শিল্পকে আরও চাঙ্গা করে দিয়েছে। এই রেস্ট্রিকশন সরকার এখনই তুলে নিক। এ ভাবে চলতে পারে না। বিজেপি-র মধ্যে কি কোনও ভালো লোক নেই? আমাদের দেশে সমস্ত ডেটা পেটিএমের দ্বারা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।এক জন মানুষের সারা জীবনের জমানো টাকা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মোদী দেশের এক্সটার্নাল সিকিওরিটি বিক্রি করে দিয়েছেন।ক্ষমা চেয়ে সরে যাওয়া উচিত মোদীর। গোটা ভারতবর্ষের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন, মানুষকে বিচার দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy