পাশাপাশি। নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
বিধানসভা ভোটই এখন পাখির চোখ করেছেন। সেই লক্ষ্যে জনসংযোগ বাড়াতে ভোটার তালিকা সংশোধনকে সামনে রেখেই মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবার তৃণমূলের এক সভায় এই বার্তা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘‘ভোটার তালিকার কাজ গুরুত্ব দিয়ে করবেন। যিনি করবেন না, তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর কোনও অধিকারই নেই।’’
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তার আগে এ দিনের দলীয় সভা থেকে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন তিনি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, নিবার্চনে জয়ী হওয়ার পরে দলের কেউ কেউ ভাবেন নিশ্চিন্তে তাঁর পাঁচ বছর কেটে যাবে! কিন্তু এই মানসিকতার জন্য গত পুরভোটে কলকাতায় কয়েকটি ওয়ার্ডে অল্প ভোটে তৃণমূল প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী এ দিন তার উল্লেখ করে বলেন, ‘‘কাউন্সিলরেরা যাঁরা মজায় ছিলেন, তাঁরা জানতেন না, এখনও সিপিএমের লোকেরা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে! ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সে জন্য গুরুত্ব দিয়ে করা উচিত।’’
ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজকে এতটাই গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা যে, এ দিন তিনি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে শীর্ষে রেখে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন। কমিটিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী, মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও রেখেছেন মমতা। তবে দলীয় সূত্রের খবর, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে দলনেত্রী শোভনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। দলনেত্রীর এ দিনের বক্তৃতার আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই কাজের নানা খুঁটিনাটি দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন মেয়র। শুধু তা-ই নয়, কাল, বৃহস্পতিবার রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজের পর্যালোচনা করার বৈঠকেও মেয়রকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ফলে, দলে শোভনের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে বলে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের ধারণা। তাঁদের মতে, মুকুল রায়ের সঙ্গে দলনেত্রীর দূরত্ব তৈরি হওয়ায় মেয়র ও ভাইপো অভিষেককেই ভোটের কাজে গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা। নজরুল মঞ্চের সভায় অভিষেকও ছিলেন। সভায় রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের সভাপতিদেরও ডাকা হয়েছিল। সভায় ছিলেন মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ও। বিধানসভা ভোটের আগে জনসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির উপরে গুরুত্ব দেওয়ার কথা এ দিনের সভায় ব্যাখ্যা করেন সুব্রত বক্সী এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলে এখন নিজেকে উৎসর্গ করার মনোভাব দরকার।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তিনি মমতা সরকারের আমলের উন্নয়নমূলক কাজ ও সাফল্যের তালিকা নিয়ে মানুষের কাছে দলীয় কর্মীদের যেতে বলেন। তবে রাজ্যে তৃণমূলের বিকল্প কোনও শক্তি নেই বলে দাবি করে সুদীপবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম এক হয়েও এখন তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারবে না।’’ তাঁর মতে এখন বিধানসভায় তৃণমূলের ১৯১ জন বিধায়ক আছেন। আগামী ভোটে সেই সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়ে যাবে। মমতাও এ দিনের সভায় বিজেপি-কে তুলোধনা করেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কয়েক জনের কাছে কলকাতা টাকা তোলার জায়গা। বিরোধীদের কটাক্ষ করে ফের মমতার মন্তব্য, ‘‘বিরোধীদের একই অঙ্গে কত রূপ! কংগ্রেস কিছু বললে সিপিএম ধেই ধেই করে সমর্থন করে! বিজেপি কিছু বললে কংগ্রেস-সিপিএম এক সঙ্গে হযবরল হয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy