—ফাইল চিত্র।
কারখানার শেডের ৩৬ একর বাদ দিলে, সিঙ্গুরের বাকি জমি ভরাটের কাজ প্রায় শেষের মুখে। তাই পূর্ব ঘোষণামতো, ২০ অক্টোবর থেকেই সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করে দেবে রাজ্য সরকার। গোপালনগর গ্রাম থেকে শুরু হবে সেই কাজ। নবান্ন সূত্রের খবর, তার পর ধাপে ধাপে ১০ নভেম্বরের মধ্যে ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক সব মালিককেই জমির ‘ফিজিক্যাল পজেশন’ দিয়ে দেবে প্রশাসন।
জমি ফেরানো শুরু হবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়েই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই সোমবার নবান্নে জানিয়েছেন, ২০ তারিখ সিঙ্গুরে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামবেন। তাঁর কথায়, ‘‘৩৬ একর জমিতে শক্ত ঢালাই রয়েছে। সেই ঢালাই ভেঙে চাষযোগ্য জমি করা খুব কঠিন কাজ। সেই কাজ আমাদের করে যেতে হবে। তবে সিঙ্গুরের ৮০% জমি এখন চাষের উপযুক্ত। তাই ২০ তারিখ থেকেই কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’’
সিঙ্গুরের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে-সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রীরা হাজির ছিলেন। পুজোর আগে হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠকে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জমি ফেরানোর সময়সূচি বেঁধে দিয়ে এসেছিলেন। তার পর থেকে কাজ শেষ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রশাসন। কাজের অগ্রগতি দেখতে বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীরা ছাড়াও মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবও সিঙ্গুরে যান।
কারখানার শেড ভাঙার পাশাপাশি জমি ভরাট করে তা চাষযোগ্য করার কাজ যে ভাবে এগিয়েছে, তাতে খুশি মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন নবান্নে তিনি জানান, হুগলির জেলা প্রশাসন-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতর, পুলিশ ও ইঞ্জিনিয়াররা যে ভাবে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করেছেন তাতে আগামী দিনে তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শে়ড ভাঙা শেষ হলে সরকার টাটাদের চিঠি দিয়ে তা নিয়ে যেতে বলবে। যদি টাটারা তা নিয়ে যেতে রাজি না হয়, তা হলে হুগলির জেলাশাসক নিলাম করে ওই শেড বিক্রি করবে। বিক্রির টাকা টাটাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, ২০ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার রীতিমতো উৎসবের আবহে জমি ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু হবে। আপাতত ঠিক হয়েছে, প্রথম দিন মুখ্যমন্ত্রী ৩০-৪০ একরের মতো জমি কৃষকদের হাতে তুলে দেবেন। পরের দিন থেকে তাঁর সরকারের মন্ত্রীরা সিঙ্গুরে গিয়ে কৃষকদের জমি ফেরাবেন। শেষ দিন, অর্থাৎ ১০ নভেম্বর শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র সিঙ্গুরে গিয়ে জমি ফেরানো কর্মসূচির সমাপ্তি টানবেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিঙ্গুরে পাঁচটি মঞ্চ গড়া হবে। প্রতিদিনই সেখানে সাংস্কৃতিক উৎসব হবে। উৎসবের মাঝেই চলবে জমি ফেরত দেওয়ার কাজ।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, জমি ফেরতের তালিকায় প্রায় চার হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। সবাইকে এক দিনে জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রতি দিনই কিছু কিছু করে জমি ফেরত দেওয়া হবে। আর সেই জমিতে কৃষকরা যাতে চাষ শুরু করে দিতে পারেন, তার জন্য কৃষি দফতর সব রকম সহযোগিতা করবে। বীজ দেওয়া হবে। চাষের যন্ত্রপাতি ভাড়া নেওয়ার ব্যাপারেও কৃষি দফতর সহযোগিতা করবে। প্রত্যেক কৃষককে চাষের কাজের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে মমতা জানান। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই ৩৬ একর জমিও যথাসময়ে চাষযোগ্য করে কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘সব জায়গাই মাটি ফেলে ভরাট করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে চাষের কাজ শুরু করতে কোনও অসুবিধা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy