Advertisement
১৮ মে ২০২৪

রোজা ভেঙে রাখিকে রক্ত দিলেন ওসমান

নিষ্ঠা ভরে রোজা রেখেছিলেন কালীগঞ্জের ছোট কুলবেড়িয়া গ্রামের ওসমান গনি শেখ। কিন্তু শেষমেশ রাখতে পারলেন কই?

রাখির শয্যার পাশে ওসমান। শনিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

রাখির শয্যার পাশে ওসমান। শনিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০১:১১
Share: Save:

রমজান মাস চলছে।

নিষ্ঠা ভরে রোজা রেখেছিলেন কালীগঞ্জের ছোট কুলবেড়িয়া গ্রামের ওসমান গনি শেখ। কিন্তু শেষমেশ রাখতে পারলেন কই? থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ন’বছরের এক অরিচিত বালিকাকে রক্ত দিতে শনিবার রোজা ভাঙলেন ওসমান। রাখি দাস নামে ওই বালিকা তাঁর ধর্মের নয়। কিন্তু তার জন্য মানবধর্ম পালন আটকায়নি।

রাখিদের বাড়ি নদিয়ার কৃষ্ণনগরের কাছে পানিনালা গ্রামে। বাবা গৌতম দাস মাছ বিক্রেতা। একটিই মেয়ে। অভাবের সংসারে সবটুকু দিয়ে তার চিকিৎসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু রক্ত লাগলেই তাঁরা চাপে পড়ে যান। শুক্রবার কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন, মেয়েকে রক্ত দিতে হবে এখনই। কিন্তু শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে ‘এ (পজ়িটিভ)’ গ্রুপের রক্ত নেই।

এলাকায় খোঁজখবর করে কাউকে পাননি গৌতম। কান্নাকাটি শুরু করে দেন তাঁর স্ত্রী তাপসী। সেই সময়ে পাড়ারই ছেলে সুজয় ঘোষ এসে জানান, ফেসবুকে এক জনের নম্বর পাওয়া গিয়েছে যিনি রক্ত লাগলে যোগাযোগ করতে বলেছেন। রাখির বাবা-মা যোগাযোগ করেন অপরিচিত সেই যুবকের সঙ্গে। টেলিফোনের ও পার থেকে ওসমান বলেন, ‘‘কাঁদবেন না দিদি, আমি পৌঁছে যাব।’’

বহরমপুর কলেজে স্নাতকোত্তর ইতিহাসের ছাত্র ওসমান। ২০১৬ সালে তাঁকেও এক আত্মীয়ের জন্য রক্ত জোগাড় করতে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে গড়েন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ‘ইমারজেন্সি ব্লাড গ্রুপ’। বর্তমানে চারটি গ্রুপ মিলিয়ে প্রায় এক হাজার সদস্য বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে আছেন। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেন। শর্ত একটাই, রোগীর পরিবারের কাউকে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। ফেসবুকেও ওসমানের নম্বর দিয়ে প্রয়োজনে ফোন করতে বলা আছে।

সমস্যা একটাই, নির্জলা উপবাসে থাকা ওসমান রক্ত দেবেন কী করে? ডাক্তারবাবু বলছেন, অন্তত বিস্কুট আর জল না খেলে রক্ত নেওয়া যাবে না! ওসমান আর কী করেন, বাচ্চা মেয়েটাকে তো আগে বাঁচাতে হবে!

হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “আজই বাচ্চাটাকে রক্ত দেওয়া খুব জরুরি ছিল।” রক্ত দিয়ে ওসমান বেরিয়ে আসতেই তার হাত দুটো জড়িয়ে ধরেন রাখির মা তাপসী। এক গাল হেসে বলেন, “কে বলে, ভগবানকে ছৌঁয়া যায় না!”

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি আর তা নিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার বাজারে এটুকুই যা ভরসার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Roza Blood Donation Thalassemia Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE