সাতসকালেও বৈঠকখানার ঘরটা প্রায় অন্ধকার। টিমটিমে বাল্বের আলোয় কোনওমতে দেখা গেল— টেবিলে এক প্রবীণের ছবি।
‘ছবিটা বাবার’— দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন জগন্নাথ মাহাতো। তাঁর বাবা দুর্লভচন্দ্র মাহাতো মারা গিয়েছেন তিন বছর আগে দীপাবলির রাতে। বাজির তীব্র শব্দে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে হেনস্থা হয়েছিলেন জগন্নাথও।
সেই থেকে আলোর উৎসবেও আঁধারেই ডুবে থাকে ঝাড়গ্রাম শহরের মধুবন এলাকায় জগন্নাথদের বাড়িটা। জগন্নাথ বলেন, “দীপাবলির রাতেই তো বাবাকে হারিয়েছি। বাজির শব্দে বুকরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।”
বাড়ির পিছনেই কুয়োর রিংয়ের ব্যবসা ছিল বছর বাষট্টির দুর্লভবাবুর। এখন জগন্নাথ সেই ব্যবসা সামলান। দুর্লভবাবু ঝুমুর গানের দলে মাদল বাজাতেন। স্ত্রী গত হয়েছেন বহুদিন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুর্লভবাবুর হৃদ্রোগের সমস্যা ছিল। জোরে শব্দ সহ্য করতে পারতেন না।
২০১৫ সালের দীপাবলির রাত। জগন্নাথ তখনও বিয়ে করেননি। দীপাবলির রাতে কয়েকজন যুবক তাঁদের বাড়ির সামনে শব্দবাজি ফাটাচ্ছিলেন। জগন্নাথ বলেন, “সেই রাতের কথা মনে পড়লে কান্না পায়। বাবা বুকে হাত দিয়ে সিঁটিয়ে বসে, প্রবল শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন।” প্রতিবাদ করেন জগন্নাথ। তাতে তাঁকেই উল্টে গালিগালাজ করে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করা হয়। এ সবের জেরে দুর্লভবাবু আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তির পরেই মৃত্যু হয় তাঁর।
পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন জগন্নাথ। পরে প্রশাসনের একাংশের চাপেই মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ নিয়ে কিছু বলতে চান না জগন্নাথ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কারও কারও গলায় ধরা পড়ল ক্ষোভ। তাঁরা বললেন, ‘‘সেই রাতে মদ্যপ কয়েক জন যুবক এমন কাণ্ড করেছিল। ঘটনাটার বিচার হল না, এটা মানা যায় না।’’
বাবার মৃত্যুর পরে জগন্নাথ বিয়ে করেছেন। দেড় বছরের মেয়ে রয়েছে তাঁর। তবে বাড়িতে আলোর উৎসবের রোশনাই নেই, নেই প্রদীপ-বাজি কেনার পালা। নিয়মরক্ষায় বড়জোর কয়েকটা মোমবাতি জ্বালানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy