হাসপাতালে ভর্তির পরপরই এক প্রসূতিকে জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দিয়েছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। যন্ত্রণায় কাতরাতে-কাতরাতে সেখানে যাওয়ার পথেই প্রসব করেন ওই মহিলা। কিন্তু সদ্যোজাতকে বাঁচানো যায়নি। সেই ক্ষোভে প্রসূতির পরিজনেরা বেধড়ক পেটালেন স্বাস্থ্যকর্তাকে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এই ঘটনার পরে মালদহের মানিকচকে পথ অবরোধও করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আহত বিএমওএইচ জয়দীপ মজুমদার মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জয়দীপবাবুর দাবি, ‘‘প্রসূতির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অস্ত্রোপচার করতে হত। গ্রামীণ হাসপাতালে সেই পরিকাঠামো না থাকার কারণে রেফার করা হয়েছিল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।’’ কিন্তু অস্ত্রোপচার করাটা এত জরুরি ছিল যখন, তখন পথেই প্রসব হল কী ভাবে? উত্তর মেলেনি চিকিৎসকের। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিকচকের সোনারপুর গ্রামের দিনমজুর সুমন ঝা-র স্ত্রী জ্যোৎস্নাদেবী রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন ওই হাসপাতালে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
নিশ্চয় যানে চাপিয়ে জ্যোৎস্নাদেবীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে ইংরেজবাজারের মিল্কি এলাকায় এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। জন্মের পর সদ্যোজাতের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকেরা তাকে মেডিক্যাল কলেজেই নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা ওই শিশুকন্যাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এর পরেই প্রসূতির আত্মীয়-পরিজনেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, সামান্য কিছু হলেই রোগীকে ‘রেফার’ করাটা চিকিৎসকদের ‘রোগ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দিনও ওই প্রসূতিকে ‘রেফার’ করা না হলে সদ্যোজাত বেঁচে যেতে পারত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে জয়দীপবাবুর উপরে চড়াও হন প্রসূতির পরিজনেরা। আবাসনে ঢুকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় তাঁকে।
মানিকচক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতেরা সকলেই সোনারপুর গ্রামের বাসিন্দা। জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
তবে মৃত সন্তানের জনক সুমনবাবুর দাবি, ‘‘হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মাত্র স্ত্রীকে রেফার করে দেওয়া হয়। তার পরে তিনি পথেই মৃত সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালে থাকলে শিশুটিকে বাঁচানো যেত। এর কৈফিয়ত চাইতে হাসপাতালে গেলে উল্টে আমাদেরই গ্রেফতার করল পুলিশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy