আলিপুর আদালতের পথে মনোরঞ্জনা সিংহ। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
গরম তাঁর একদম সয় না। থাকতে পারেন না অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেও। তাঁর দরকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আর সুগন্ধি ছড়ানো ঘর। গ্রেফতারের পর থেকেই বারবার এ কথা জানিয়েছেন সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত মনোরঞ্জনা সিংহ।
বুধবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরে দফায় দফায় জেরার পরে গ্রেফতার করা হয় পূর্বতন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনাকে। তাঁকে রাতে রাখা হয়েছিল ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায়। সেখানেই নানা রকম অভিযোগ করতে থাকেন তিনি। সারদা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে মাতঙ্গকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এখন জেল-হাজতে আছেন। বুধবার মনোরঞ্জনার সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষকেও।
বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে অতিরিক্ত মু্খ্য বিচারক সৌগত রায়চৌধুরী এজলাসে তাঁদের হাজির করানো হয়। মনোরঞ্জনার পরনে ছিল সাদা জরির কাজ করা সালোয়ার-কামিজ। পায়ে সাদা পেনসিল-হিল জুতো। সিবিআই এবং নিজের আইনজীবীদের সওয়াল মন দিয়ে শুনেছেন তিনি। মামলার কাজ চলাকালীন এজলাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর দুই দেহরক্ষী।
তদন্ত সংস্থা সূত্রের খবর, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে টাকা নিয়েও চুক্তিমাফিক কাজ করেননি মনোরঞ্জনা। তার উপরে গোড়া থেকেই তথ্য গোপন করে বিভ্রান্ত করে চলেছেন তদন্তকারীদের। মাতঙ্গকেও গ্রেফতার করা হয়েছে সুদীপ্তের কাছ থেকে হিসেব-বহির্ভূত টাকা নেওয়ার অভিযোগে। মাতঙ্গ ও মনোরঞ্জনা গুয়াহাটিতে একটি চ্যানেল চালাতেন। সুদীপ্তের সঙ্গে তাঁদের ৪২ কোটি টাকার একটি চুক্তি হয়। তার শর্ত ছিল, মনোরঞ্জনা একটি সংবাদ চ্যানেল গড়ে তুলবেন। সেই চ্যানেলের রাশ থাকবে সারদার হাতে, সারদার প্রচারও চলবে তাতে। মনোরঞ্জনা চ্যানেল চালু করলেও সেটি বেশি দিন চলেনি। সিবিআই-কে লেখা চিঠিতে সুদীপ্তের অভিযোগ ছিল, মনোরঞ্জনা চুক্তি মানেননি। তা ছাড়া চাপ দিয়ে দফায় দফায় প্রচুর বাড়তি টাকা আদায় করেছেন।
সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত আদালতে বলেন, ‘‘মনোরঞ্জনা খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি। আপাতত সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২২ কোটি টাকা তছরুপের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে আরও জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে।’’ মনোরঞ্জনার সঙ্গে সঙ্গে শান্তনুকেও জেরা করার প্রয়োজন আছে বলে আদালতে জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী।
মনোরঞ্জনার আইনজীবী বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘আমার মক্কেল এক জন সরকার স্বীকৃত সাংবাদিক। একটি নিউজ চ্যানেল বিক্রি বাবদ সারদার মালিক সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আমার মক্কেল কোনও ভাবেই সারদার আমানতকারীদের প্রভাবিত করেননি। সব সময়েই তিনি সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সাহায্য করেছেন। তাই মনোরঞ্জনাকে শর্তাধীন জামিন দেওয়া হোক।’’ একই আর্জিন জানান শান্তনুর আইনজীবী। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে মনোরঞ্জনা ও শান্তনুকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সিবিআইয়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত, রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের আইনজীবীও এ দিন তাঁর মক্কেলের জামিনের আবেদন জানান অতিরিক্ত মুখ্য বিচারকের আদালতে। সেই আবেদনও খারিজ হয়ে গিয়েছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, রাতে মনোরঞ্জনা ও শান্তনুকে ফের জেরা করা হয়। ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার এক কর্তা জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই সারদা এবং অন্য বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজভ্যালির আর্থিক কলেঙ্কারির মামলায় উত্তর ২৪ পরগনার এক তৃণমূল বিধায়ক এবং পূর্ব মেদিনীপুরের একটি পুরসভার চেয়ারম্যানকে ডাকার প্রস্তুতি চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy