আলমারির ফাঁক দিয়ে সোয়েটারগুলো দু’বেলা তাকে খুঁজছে। অনেকে আশা করেছিলেন, বড়দিনের উৎসব তাকে খুঁজে পাবে। কিন্তু তাকে ঘিরে জমে ওঠা উৎসবের মরসুম শেষ হতে চললেও তার দেখা নেই।
হাওয়া অফিসও তার আসার খবর জোর গলায় দিতে পারছে না। আর সে না আসায় দাপট বেড়েছে জীবাণুদের। ডিসেম্বরের শেষে কোথায় মানুষ শীতে কাবু হবেন, তা না ভাইরাল ফিভার, জ্বর-সর্দি-কাশি-গায়ে ব্যথায় এই সময়ে ঘরবন্দি অনেকেই। তাদের বড় একটা অংশ আবার চিকেন পক্সের শিকার। অসময়ে হানা দেওয়া এই দল বসন্ত মহানগর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে শহরতলিতে।
জীবাণু বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বসন্ত কালে যে সব জীবাণুর দাপট বাড়ে, এই আবহাওয়ায় তাদের শক্তি বাড়ছে। ডিসেম্বরে শীত শীত ভাব থাকলেও মাঝে মাঝে ভ্যাপসা গরমে বসন্তকে মনে করাচ্ছে। চিকেন পক্স বসন্ত কালের রোগ। কিন্তু কলকাতার আবহাওয়ায় এখন সারা বছরই একটি দুটি করে চিকেন পক্সের রোগী দেখা যায়। কিন্তু এ বছর শীতকালটায় চিকেন পক্সের দাপট অন্যবারের থেকে বেশি।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ বার শীতে বাচ্চাদের মধ্যে পক্সের দাপট বেশি দেখা যাচ্ছে। যা অন্যান্য বছর অনেক কম থাকে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্ণব হালদারের কথায়, ‘‘আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরে ক্যালেন্ডারের হিসাব মতো জীবাণুর সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।’’
আবহাওয়া দফতরের হিসাব বলছে, এ বছর ডিসেম্বরে শীতের দাপট নেই। গত বছর ৩০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এ বছর তাপমাত্রা নেমেছে ১৫ ডিগ্রি। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখন অভিভাবকেরা বাচ্চাদের শরীর নিয়ে সচেতন থাকেন। কিন্তু পরিবেশের ওপর কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তাই সচেতনতা বজায় রাখলেও পরিবেশ খামখেয়ালির জন্য ভুগতে হচ্ছে।
শীত উধাও হওয়ায় সর্দি-জ্বর এবং পক্সের পাশাপাশি এখনও জারি রয়েছে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকেন গুনিয়ার হানা। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা এবং পতঙ্গবিদ অমিয় হাটি বলছেন, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকলে মশার সংক্রমনের ক্রিয়া বেড়ে যায়। তাই ডিসেম্বরেও তাপমাত্রা বেশি থাকায় মশাবাহিত রোগের দাপট রয়েছে। শীতকালে মশার বংশবৃদ্ধি হয় না। কিন্তু শীত না থাকায় বৃর্ষাকালের মতো মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। তাই ডেঙ্গি, চিকনগুনিয়ার দাপট রয়েছে।
বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরে সর্দি-কাশিতে ভোগার ফলে অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ফুসফুসে সংক্রমন দেখা দিচ্ছে। বয়স্কদের এবং যারা ধারাবাহিকভাবে হাঁপানির সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের শীতকালে শ্বাসকষ্ট দেখা দিত কিংবা শ্বাসকষ্ট বাড়ত। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে অল্প বয়সের ছেলেমেয়েরাও মারাত্মকভাবে ফুসফুসে সংক্রমনে ভুগছেন। শ্বাসকষ্টের জেরে কষ্ট পাচ্ছেন। বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘অনেকেই অল্প শীতে সোয়েটার পরেন না। ফলে কখন ঠান্ডা লেগে যায় টের পাওয়া মুশকিল। এর জেরেই শীতের ভাইরাসেরা দেহে ঢুকে সক্রিয়তা দেখাচ্ছে। সর্দি-কাশি দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন তাতে ভোগার জেরেই শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও বাড়ছে।’’ আর এক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারও বলেন, ‘‘যাঁরা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন, তাপমাত্রার এই হেরফেরের কারণে তাঁদেরও সমস্যা বাড়ছে।’’
চিকিৎসক চন্দন সেনের পরামর্শ, আবহাওয়ার এই খামখেয়ালির সময়ে শরীর সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। মেনুতে রাখতে হবে কম মশলা দিয়ে তৈরি হালকা খাবার এবং বেশি পরিমান জল খেতে হবে। তা হলে অনেক সমস্যা এড়ানো সহজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy