Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Malda

ভোট আসে আর যায়, বদলায় না ‘বিষ-জল’

খালতিপুরের রুস্তম আলি টোলা, বিশারদ সর্দার টোলা, এমএসকে পাড়া, রাজনগর, মানিকচকের শেখপুরার মতো গ্রামগুলি এখনও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের পরিষেবা থেকে দূরে।

drinking water.

—প্রতীকী ছবি।

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ০৭:৩৬
Share: Save:

কালিয়াচকের খালতিপুর থেকে মানিকচকের শেখপুরা গ্রামের দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার। কিন্তু এই যন্ত্রণা এক সুতোয় বেঁধে দিয়েছে খালতিপুরের এনামুল মোমিন ও শেখপুরার আতালু শেখকে। সে ‘বাঁধনের’ নাম ‘আর্সেনিক’। ভোট এলেই মালদহ জেলায় নেতা-নেত্রীদের মুখে আর্সেনিক-মুক্ত বা পরিস্রুত পানীয় জল নিয়ে আশ্বাস ভেসে ওঠে। ভোট ফুরলে তা ফের ডুবে যায়, বলছেন স্থানীয়রাই। দীর্ঘদিনের সমস্যার সুরাহা না হওয়ায়, ক্ষোভে অনেক জায়গাতেই এলাকাবাসী দিয়ে রেখেছেন ভোট বয়কটের ডাক।

খালতিপুরের রুস্তম আলি টোলা, বিশারদ সর্দার টোলা, এমএসকে পাড়া, রাজনগর, মানিকচকের শেখপুরার মতো গ্রামগুলি এখনও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের পরিষেবা থেকে দূরে। পঞ্চাশোর্ধ্ব এনামুল বলেন, “২০ বছর শরীরে আর্সেনিকের বিষ বয়ে বেড়াচ্ছি। গায়ে কালো ছোপ ছোপ। দেখলে আঁতকে উঠতে হয়।”

মালদহের এই গ্রামগুলিতে ছ’শোর বেশি রোগী আর্সেনিকের বিষে আক্রান্ত, দাবি স্থানীয়দের। রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। খালতিপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা জাকিরা খাতুন বলেন, “গ্রামে আর্সেনিকমুক্ত জল না পৌঁছনোয়, টিউবওয়েলের জলেই রান্না করতে হয়। পরিস্রুত জল পেতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দুই কিলোমিটার দূরের দরিয়াপুর কিংবা দেড় কিলোমিটার দূরের সিলামপুর যেতে হবে। না হলে, টাকা দিয়ে জল কিনে নিতে হবে। কোনওটাই সম্ভব হয় না।”

১৯৯০ সালে মালদহের কালিয়াচকের তিনটি, রতুয়ার দু’টি এবং ইংরেজবাজার ও মানিকচক ব্লক ‘আর্সেনিক প্রবণ’ হিসাবে চিহ্নিত হয়। ২০০১-এ মানিকচকে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের প্রকল্প তৈরি হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের দাবি, জনসংখ্যা বাড়ায়, জলের চাহিদা বেড়েছে। সমস্ত গ্রামে চাহিদা মতো জল দেওয়া যাচ্ছে না।

পরিণাম? রুস্তম আলি টোলা, বিশারদ সর্দার টোলা, এমএসকে পাড়ার বাসিন্দারা ভোট বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়ে সরকারি দফতরে চিঠি জমা দিয়েছেন। মাস দু’য়েক আগে, এলাকার পরিস্থিতি জেনে আগে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ ‘এড়িয়ে গিয়েছেন’ ‘দিদির দূত’, রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “বাম আমলেই আর্সেনিকমুক্ত জল পরিষেবা চালু হয়েছিল। তৃণমূল নতুন করে এলাকা বাড়ায়নি।” কংগ্রেস নেতা ইশা খান চৌধুরীর দাবি, “আর্সেনিকমুক্ত জলের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রকে আমরা একাধিক বার চিঠি দিয়েছি।” সাবিনা বলেন, “আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সব গ্রামে ২০২৪-এর মধ্যে পৌঁছে যাবে বলে আশা রাখি।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, আর্সেনিকমুক্ত জল দিতে নতুন করে ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। যদিও প্রকল্পটি কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ।

গ্রামবাসীরা অবশ্য না আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস করছেন না। শেখপুরার আতালু শেখ বলেন, “নেতারা আসেন-যান। বিষ-জল বদলায় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Drinking water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE