এমনই সরায় কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনা হয়। নিজস্ব চিত্র
নবপত্রিকাকে সামনে রেখে দুর্গারূপেই পূজিতা হন সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মী।
ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেনগুপ্ত বাড়ির প্রায় তিনশো বছরের পুরনো পুজোয় চলে আসছে এমনই প্রথা। লক্ষ্মীপুজোয় নবপত্রিকার সামনে রাখা হয় কালীঘাটের পটুয়াদের তৈরি মাটির সরায় আঁকা দুর্গার প্রতিকৃতি। সরায় দুর্গার পায়ের তলায় থাকেন ত্রিনয়নী লক্ষ্মী!
কেন এমন প্রথা? সেনগুপ্ত পরিবারের সদস্যরা জানালেন, তাঁদের আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরের বান্ধব-দৌলতপুর গ্রামে। পূর্ববঙ্গে ৩০০ বছর আগে পারিবারিক দুর্গাপুজো শুরু হয় একচালার মৃন্ময়ী প্রতিমায়। সেই সঙ্গে কোজাগরীর রাতে নবপত্রিকা ও সরায় কোজাগরী লক্ষ্মীর আরাধনাও হত। ১৭৫২ সালে গৃহকর্তা পেশায় প্রখ্যাত কবিরাজ রামগতি সেনগুপ্তর আমলে পুজোর জৌলুস বাড়ে। দেশভাগের পরে রামগতির উত্তরসূরিরা পূর্ববঙ্গ থেকে ঝাড়গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। পূর্ববঙ্গের বসতবাটি ছেড়ে এলেও ঐতিহ্যের পুজো ছাড়তে পারেননি সেনগুপ্তরা।
এরপর ১৯৪৮ সাল থেকে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে সেনগুপ্তদের পারিবারিক দুর্গাপুজো ও কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়। পরিবারের দাবি, পূর্ববঙ্গ থেকে ধরলে পুজোর বয়স ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেনগুপ্তরা শক্তির উপাসক। তাই কোজাগরী পূর্ণিমায় মাটির সরায় আঁকা দুর্গার সঙ্গে ত্রিনয়নী লক্ষ্মীর পুজো হয়। পরিবারের সদস্য দীপঙ্কর সেনগুপ্ত, সঙ্গীতা সেনগুপ্তরা জানান, পূর্ণিমা তিথি শুরু হওয়ার আগে বাগান থেকে কলা গাছ তোলা হয়। তারপর সেই কলাগাছের সঙ্গে কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম, অশোক, মান ও ধান একত্রে একজোড়া বেলের সঙ্গে শ্বেত অপরাজিতার লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে বধূর আকার দেওয়া হয়। তবে দুর্গাপুজোর মতো লক্ষ্মীপুজোয় নবপত্রিকার স্নান হয় না। দুর্গাপুজো হয় দুর্গা দালানে। তবে লক্ষ্মীপুজোটা হয় বাড়ির ভিতরে।
জনশ্রুতি, বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর ভোগদানের সময়ে একবার বর্গি-হানায় ঠাঁইনাড়া হন সেনগুপ্তরা। সেই থেকে যে কোনও পুজোয় রান্না করা অন্নভোগ দেওয়া বন্ধ। লক্ষ্মীপুজোয় অন্নভোগের পরিবর্তে লুচি, পঞ্চব্যঞ্জন, সুজি, নারকেলের নাড়ু, গুড় মেশানো ঝুরঝুরে খই নিবেদন করা হয়। পুজোর একটি বিশেষ অনুসঙ্গ হল বাণিজ্যতরী সাজানো। কলা গাছের ছালের পেটো দিয়ে বাণিজ্যতরী সাজানো হয়ঘটের সামনে।
সেই বাণিজ্যতরীতে পঞ্চশস্য, সোনা, রুপো-সহ পঞ্চরত্ন দেওয়া হয়। লক্ষ্মীপুজোর নবপত্রিকার শাড়ি কেবল পরিবারের মহিলারাই ব্যবহার করেন। পুজোর জৌলুস এখন কমে গিয়েছে। পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের অনেকেই প্রয়াত। ঝাড়গ্রামের বাড়িতে কেউই থাকেন না। পারিবারিক পুজো টিকিয়ে রাখার জন্য কলকাতা থেকে প্রতিবছর আসেন রামগতির উত্তরসূরিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy