Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Pink Cab

Cab Driver: পরিবারের অন্ন সংস্থানে উৎসবেও ছুটি নেই, ছুটছে সায়রার ক্যাব  

পাঁশকুড়া ব্লকের চৈতন্যপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজয়রামচকে থাকেন সায়রা বানু।

সায়রা বানু এবং তাঁর বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

সায়রা বানু এবং তাঁর বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২১ ০৯:২৭
Share: Save:

বন্যায় ভেঙেছে ঘর। ছেলেমেয়েদের তাই পাঠিয়ে দিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। সংসারের অনটন যেতে নারাজ। উৎসবের দিনগুলোতে বাড়তি আয়ের আশায় তাই সকাল হতে না হতেই পিঙ্ক ক্যাব নিয়ে বেরিয়ে পড়েন সায়রা বানু। সে জন্য এবার পুজোয় আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে পুজো দেখতে যাওয়া হবে না।

নদী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় রেশনের গাড়ি ঢুকতে পারেনি। তাই মেলেনি চাল-গম।মা চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফিরবে বলে পথ চেয়ে বসে থাকে ছেলেমেয়েরা। সংসারের জোয়াল কাঁধে নিয়ে পিঙ্ক ক্যাবের স্টিয়ারিংকেই সম্বল করেছেন সায়রা।

পাঁশকুড়া ব্লকের চৈতন্যপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজয়রামচকে থাকেন সায়রা বানু। ২০০২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৩ সাসে বিয়ে হলেও কয়েক বছরের মধ্যে ভেঙে যায় দাম্পত্য। ছেলে ও মেয়েকে মানুষ করার জন্য বাপের বাড়িতে থেকে টিউশন শুরু করেন সায়রা। সরকারি প্রকল্পে ২০১৯ সালে কেনেন পিঙ্ক ক্যাব। ৪ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা দামের গাড়ির জন্য রাজ্য সরকার দেড় লক্ষের কিছু বেশি টাকা ভর্তুকি দিয়েছিল। বাকি ২ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা মাসে ৭ হাজার ৪০০ টাকার কিস্তি হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে শোধ দেওয়ার চুক্তি হয় সায়রার সাথে। তবে গাড়ি কিনে সংসার চালানোর কথা ভাবলেও সেই পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।

মহিলা বলে প্রথম প্রথম যাত্রীরা সায়রার গাড়িতে ভয়ে উঠত না।গাড়ি কেনার এক বছর পর থেকে শুরু হয় লকডাউন।মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সায়রার। গাড়ির কিস্তি মেটাতে গিয়ে টান পড়েছে হাঁড়িতে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাঁশকুড়ার উদয়পুরে কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় সায়রাদের গ্রাম সহ তিনটি গ্রাম। কয়েকদিন আগে ফের ভাঙা বাঁধ দিয়ে গ্রামে জল ঢুকলে সায়রার মাটির বাড়ির একাংশ এবং রান্নাঘর ভেঙে যায়। সরকারি ত্রাণ বলতে জুটেছে একটি ত্রিপল। দুয়ারে সরকার শিবিরের জন্য সায়রার গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল পাঁশকুড়া ব্লক প্রশাসন। বিধানসভা ভোটের আগে দুয়ারে সরকারে পাকাবাড়ির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন সায়রা। এখনও মেলেনি টাকা। বন্যায় বাড়ি পড়ে যাওয়ায় ছেলেমেয়েদের আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে ভিটে আগলাতে জীবনেক ঝুঁকি নিয়েই পড়ে রয়েছেন ভেঙে পড়া বাড়ির একাংশে।

ছেলে আহাসানুর রহমান একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে ইত্তেশাম খাতুন পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। মাস গেলে প্রায় ৫ হাজার টাকা পড়াশোনার খরচ। চলতি মাসে গাড়ির কিস্তি দিতে পারেননি সায়রা। আশা ছিল বাড়ি তৈরির জন্য মিলবে সরকারি সাহায্য। কিন্তু সেখানেও আশা দেখছেন না সায়রা। ফের ঠাঁইনাড়া হওয়ার আশঙ্কা নিয়েই দিন কাটছে।

ছেলেমেয়েরা আত্নীয়ের বাড়িতে থাকলেও মা কখন চাল-ডাল কিনে ফিরবে সে দিকেই তাকিয়ে থাকে আহাসানুর ও ইত্তেশাম। আহাসানুরের কথায়, ‘‘গত বছর পুজোয় মায়ের সাথে গাড়িতে ঠাকুর দেখেছিলাম।বন্যায় আমাদের ঘর পড়ে গিয়েছে।তাই এবার ঠাকুর দেখতে আর যাওয়া হবে না।মায়ের রোজগার কমেছে।বাড়িতে খাবারও তেমন মজুত নেই। আমাদের পেট ভরাতে গাড়ি নিয়ে ছুটতে হয় মাকে। আমাদের কাছে অন্নপূর্ণা আমাদের মা।’’

একরাশ ক্ষোভ নিয়ে সায়রা বলেন, ‘‘মাথার ওপরের ছাদটুকুও যেতে বসেছে। আবাস যোজনায় আবেদন জানিয়েও বাড়ি পাইনি। বন্যায় ঘর পড়ে গেলেও ত্রিপল ছাড়া কিছু জোটেনি।’’ পাঁশকুড়ার বিডিও ধেনধুপ ভুটিয়া বলেন, ‘‘আবাস যোজনায় নাম থাকলে উনি বাড়ি পাবেন। বন্যায় যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তাদের সরকার বাড়ির অনুমোদন দিলে তখনই উনি তা পেতে পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pink Cab Panskura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE