অল্প বিস্তর কাজ এবার পুজোয়। নিজস্ব চিত্র
উৎসবরে মরসুমে গত বছর এমন দিনগুলিতে নাওয়া-খাওয়ার উপায় থাকত না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চুড়িদার, সালোয়ার-কামিজ, ব্লাউজ বানাতে ব্যস্ত থাকতেন কামরুল, ফিরোজ, বাচ্চু দাসের মতো দর্জিরা।
করোনা পরিস্থিতিতে এবার একেবারে আলাদা দুর্গা পুজো হচ্ছে। পুজোর আর সপ্তাহ দুয়েকও বাকি নেই। অথচ দোকান খুলে চুপচাপ বসে থাকতে হচ্ছে ওই সব দর্জিদের। কেউ টিভিতে দেখছেন সিরিয়াল। তো কেউ দেখছেন আইপিএল।
কাঁথি শহরের ক্যানালপাড় সংলগ্ন একটি সিনেমা হলের কাছে মেয়েদের চুড়িদার এবং ব্লাউজ তৈরির জন্য বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। অন্য বছরগুলিতে পুজোর এই সময়ে এই সব দোকানের সামনে মহিলাদের লম্বা লাইন পড়ে যেত। ধাক্কাধাক্কি করেই দোকান থেকে বরাত দেওয়া জিনিস সংগ্রহ করতে হত গ্রাহকদের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই দোকানে গিয়ে দেখা গেল খদ্দেরের দেখা নেই। নাগাদ টিভির পর্দায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ আর কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের আইপিএলের খেলা দেখছেন দর্জি ফিরোজ। তিনি বলেন ‘‘এমন অবস্থা আগে কখনও হয়নি। গত এক মাসে চুড়িদারের বরাত আসেনি। হাতে কোনও কাজ নেই। তাই আইপিএলের খেলা দেখে সময় কাটাতে হচ্ছে।’’ ফিরোজের দু’টো দোকান বাদে দোকান বাচ্চু মণ্ডলের। ভর সন্ধ্যায় তাঁর দোকানের টিভিতে সিরিয়াল চলছে। বাচ্চুর কথায়, ‘‘লকডাউনের কারণে সে রকম বরাত পাইনি। তাই কাজের চাপ একেবারেই কম। টিভি দেখে সময় কাটাচ্ছি।’’
অন্য কয়েকজন দোকানদার আবার জানাচ্ছেন, এখন লকডাউন শিথিল পর্বে আমজনতা পুজোর কেনাকাটা করছেন। তবে সবই শপিংমল বা রেডিমেড পোশাকের দোকানে। টেলার দোকানে এখন নতুন পোশাক বানাতে দিলে পুজোর মধ্যে তৈরি না হওয়ার সম্ভানা রয়েছে। এক ব্যবসায়ী কামরুলের কথায়, ‘‘অক্টোবরে চাকরিজীবীদের বেতন হলে নতুন কাজের বরতা মিলবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সবাই তো দেখছি রেডিমেড পোশাকের দোকানে ছুটছেন।’’
কাঁথির ওই পাড়ায় দর্জিদের কমপক্ষে আট-দশটি দোকান রয়েছে। সেখানে ১০০ জনের বেশি কারিগর কাজ করেন। পুজোর মরসুমে কাজের চাহিদা না থাকায় সেই সব কারিগরেরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। সকলরেই এক কথা— ‘‘টাকাই নেই। তো পুজোয় এবার আনন্দ করব কী করে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy