সহায়: রাতের শহরে দুঃস্থকে কম্বল দান ‘ব্যাড বয়’দের। নিজস্ব চিত্র
ঠান্ডায় কোনওমতে পাতলা ছেঁড়া চাদর গায়ে দিয়ে ঝাড়গ্রাম শহরের ফুটপাথে শুয়েছিলেন ফুলমণি। ১ জানুয়ারি রাতে আচমকা সেখানে মোটরাইক নিয়ে হাজির হয় জনা দশেক যুবক। তাদের হাতে নানা রঙের কম্বল। যুবকদের পুলিশ ভেবে ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি উঠে পালাতে যাচ্ছিলেন ওই প্রৌঢ়া। তাঁকে আশ্বস্ত করে ফুলমণির গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিলেন প্রতীক মৈত্র, সুদীপ মাহাতো, বিজয় সিংহরা।
পরম স্নেহে ফুলমণির গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে প্রতীক, বিজয়রা বললেন, “রেস্তোরাঁয় পার্টি করে, বেড়িয়ে বছরে হিসেব করলে কত টাকা সবাই খরচ করি। কয়েকদিন বাড়তি খরচ না করলে অনেক মলিন মুখে হাসি ফোটানো যায়। সেই হাসির আর আশীর্বাদের দাম যে অনেক। সেটা আজ বুঝলাম।” ঝাড়গ্রাম শহরের একটি আড্ডাস্থলের জনা কুড়ি এই যুবকদের কেউ চাকরি করেন, কেউ বেকার, কেউ ছোটখাটো ব্যবসা করেন। কিশোর বেলায় ক্রিকেট খেলার সুবাদে এই ‘ব্যাড বয়’দের বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল। সাবালক হয়ে তাঁদের কাছে অবসর যাপনের মানে ‘লেট নাইট পার্টি’ কিংবা গভীর রাতে ‘লং ড্রাইভ’-এ হুল্লোড়।
প্রতীক, সুদীপরা জানালেন, রাতে মোটরবাইকে করে শহর ঘুরে বেড়ানোটা তাদের অন্যতম নেশা। কিছুদিন আগে রাতে ঘোরার সময় অরণ্যশহরের পাঁচ মাথার মোড়ে কয়েকজনকে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে দেখেন তাঁরা। কৌতুহলবশত তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রতীকরা জানতে পারেন, রাতের শেষ বাস ধরতে না পেরে বেলপাহাড়ির ওই বাসিন্দারা ফুটপাথে রাত কাটাচ্ছেন। ঠান্ডায় তাঁদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আগুন জ্বেলে তাঁদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করেন প্রতীকরা। তখনই খেয়াল হয়, উল্টোদিকের ফুটপাথে শুয়ে থাকা কয়েকজন ভবঘুরের গরম পোশাক বা কম্বল নেই। ঠান্ডায় তাঁরা কাঁপছেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিজয় সিংহ ও প্রতীক মৈত্র, মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী সৈকত মণ্ডল, দলিল লেখক সুদীপ মাহাতো, কর্মপ্রার্থী ব্রহ্মানন্দ চক্রবর্তীরা একযোগে বলেন, “চোখ থাকলেও আমরা এতদিন অন্ধ ছিলাম। রোজ রাতে শহরে ঘুরি। ফুটপাথে এ ভাবে বেশ কিছু মানুষ কষ্টে রাত কাটান তা দেখেও এতদিন আমাদের মনে হয়নি। সে দিনই প্রতীকরা সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা ‘খারাপ ছেলে’ হিসেবেই নিজেদের পরিচয় দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে ‘ব্যাড বয়েজ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থা গড়ে ফেলেছেন প্রতীকরা। সদস্যরা সাধ্যমতো টাকা দিয়ে তহবিল গড়েছেন। তাঁরা শপথ নিয়েছেন মানুষের পাশে থাকবেন।
নিজেদের টাকায় ৫০টি কম্বল কিনে সোমবার রাতভোর শহরের আনাচে কানাচে খুঁজে ফুটপাথে শুয়ে থাকা ২৭ জনের হাতে কম্বল তুলে দিয়েছেন প্রতীকরা। এই কর্মসূচি মাসভর চলবে। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকার পথবাসীদের জন্য খাবারের সংস্থার করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আহারে আনন্দ’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন প্রতীকরা। সেখানে ইচ্ছে করলে যে কেউ উদ্বৃত্ত খাবার দান করতে পারেন। খারাপ ছেলেরা সেই খাবার পৌঁছে দেবে দুঃস্থদের কাছে। চলতি মাসে একটি অনাথ আশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে বনভোজন করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy