Advertisement
১৮ জুন ২০২৪
ভোটের আগেই জয়

হতাশায় নতুন ভোটাররা

কিন্তু কোথায় কী! মনোনয়ন জমা শুরুর পর থেকে খবরের কাগজ, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলকে বিরোধীদের উপর শাসক দলের অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে সরব হতে দেখেছে সে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গোলমালের খবর পাওয়ায় ভোটের দিন কী হবে সেই আশঙ্কায় ভোট দিতে যাওয়া হবে কিনা তা নিয়ে বাড়িতেও আলোচনা চলছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৯
Share: Save:

ভোটার তালিকায় নাম উঠার পর একটু অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল বছর আঠারোর ছাত্রটির। হলদিয়ার রামপুর কলেজের ছাত্রটির মুহূর্তে মনে হয়েছিল এ বার সত্যিই বড়ে হয়ে গিয়েছে সে। পঞ্চায়েতে এই প্রথম ভোট দেবে। সরাসরি গ্রামের উন্নয়নের কাজে শরিক হতে পারবে!

কিন্তু কোথায় কী! মনোনয়ন জমা শুরুর পর থেকে খবরের কাগজ, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলকে বিরোধীদের উপর শাসক দলের অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে সরব হতে দেখেছে সে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গোলমালের খবর পাওয়ায় ভোটের দিন কী হবে সেই আশঙ্কায় ভোট দিতে যাওয়া হবে কিনা তা নিয়ে বাড়িতেও আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত যে সে আর ভোট দিতে পারবে না তা ভাবেনি ছাত্রটি।

কারণ, তার গ্রামে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রই এবার থাকছে না। ভোটের মনোনয়নজমা দেওয়ার আগেই ওই আসন বিরোধীশূন্য হওয়ায় জিতে গিয়েছে শাসকদল। পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা ব্লকের গুয়াবেড়িয়া, হোড়খালি ও জয়নগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নতুন ভোটারদের এবার ওই ছাত্রের মতই অবস্থা। ওই সব এলাকায় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের তিনটি স্তরে তৃণমূল প্রার্থীরা এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত করেছে। বিরোধী দলের প্রার্থী না থাকায় সুতাহাটা ব্লকের ৪৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৮টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের একটি আসন বিরোধীশূন্য হওয়ায় শাসক দলের প্রার্থীরা জিতে গিয়েছেন।

জয় নিশ্চিত হওয়ায় দলের প্রার্থী থেকে কর্মী-সমর্থকরা অনেক জায়গাতেই উল্লাসে মেতেছে। কিন্তু সেই উল্লাসের মাঝে তাল কাটছে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের ভোট না দিতে পারার হতাশা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন শাসক দল থেকে বিরোধী নেতা-নেত্রীরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলছে, অথচ সেখানে নিজেরাই গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলছে। তাদের ক্ষোভ নির্বাচন কমিশনের প্রতিও। তাদের বক্তব্য নির্বাচন কমিশন নানা ভাবে প্রচার করে ভোট দিতে উৎসাহ দিচ্ছে। অথচ ভোটারদের অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে কমিশনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

হোড়খালি এলাকার এক যুবক এবারই প্রথম ভোটাধিকার পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখেছি। ছোট অবস্থায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ভোটের লাইনেও দাঁড়িয়েছি। তখন ভোটের মানে বুঝতাম না। কিন্তু এখন ভোটের অর্থ জানি। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম ভোট দেব বলে আশায় ছিলাম। কিন্তু সে সুযোগ আর হল না। ভোটগ্রহণ ছাড়াই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন হলে আমাদের মতামতের আর গুরুত্ব কোথায়।’’

নতুন ভোটারের হতাশার কথা মানছেন এলাকা থেকে জেলা পরিষদের আসনে জয় নিশ্চিত করা তৃণমূল প্রার্থী আনন্দময় অধিকারী। আনন্দময়বাবুর কথায়, ‘‘প্রথমবার ভোট দেওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের ভোটারদের আগ্রহ ও উৎসাহ থাকা স্বাভাবিক । কিন্তু আমাদের এলাকায় বিরোধীদের সাংগঠনিক শক্তি এতটাই দুর্বল যে তারা প্রার্থী দিতেই পারল না। তবে নতুন সব ভোটারদের কাছে গিয়ে তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আসব।’’

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পরিতোষ পট্টনায়েকের অভিযোগ, ‘‘গতবার পঞ্চায়েত ভোটে প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতিতে আমাদের প্রার্থীরা বিপুলভাবে জয়ী হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনাও করেছি আমরা। তার পরেও এবার আমরা প্রার্থী দিতে পারছি না, তৃণমূলের এমন হাস্যকর যুক্তি এলাকার শাসক দলের লোকও মানবে না।’’

সুতাহাটা ব্লকের মত নিরঙ্কুশ না হলেও জেলার নন্দীগ্রাম-১ ও ২, খেজুরি-১ ও ২, পাঁশকুড়া ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় সেখানেও নতুন ভোটাররা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন না।

জেলার রাজনৈতিক মহলের মতে, এর ফলে নবীন ভোটারদের একাংশের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ অনেকটাই ধাক্কা খাবে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE