রাজু গুপ্ত (ইনসেটে)-এর বাড়ির সামনে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
পুরবোর্ড গঠনের আগে বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীকে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল রেলশহরে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। আর পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থলে গুলি চলার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
রবিবার ঘটনাটি ঘটে খড়্গপুর শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের খরিদা বাজারে বিজেপির দলীয় কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায়। ওই ওয়ার্ড থেকে এ বার জিতেছেন বিজেপি-র সুনীতা গুপ্ত। তাঁর স্বামী রাজু গুপ্তকে এ দিন প্রথমে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। তারপর তাঁকে লক্ষ করে গুলি চলে। তবে বাড়িতে ঢুকে যাওয়ায় রাজু রক্ষা পান।
গত ২৮ এপ্রিল পুরভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই অপরাধের শহর খড়্গপুরে গোলমাল শুরু হয়েছে। পুর-নির্বাচনের ফল হয়েছে ত্রিশঙ্কু। ৩৫টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূল ১১টি করে আসন পেয়েছে। বামেরা ৬টি ও বিজেপি ৭টি আসনে জিতেছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার জন্য তৃণমূল বিরোধী কাউন্সিলরদের ভাঙানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ। এ দিনের ঘটনাতেও তৃণমূল জড়িত বলে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল আমাদের জয়ী প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই রাজু গুপ্তকে লক্ষ করে গুলি চলেছে। পুলিশি উদাসীনতা এর পিছনে দায়ী।’’ খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত অবশ্য বলেন, “ঘটনায় কেউ জখম হয়নি। আমাদের আধিকারিকেরা এলাকায় গিয়ে গুলি চলার প্রমাণও পাননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন বেলা একটা নাগাদ খরিদায় বিজেপি কার্যালয় বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন রাজু। তখন গাড়িতে কয়েক জন যুবক এসে রাজুর সঙ্গে কথা বলেন। তারপর রাজু বাড়ির দিকে যেতে গেলে তাঁকে লক্ষ করে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে রাস্তায় পড়ে। রাজুর কথায়, “তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হোন্দল-সহ চার দুষ্কৃতী আমাকে গাড়িতে তুলতে চেয়েছিল। আমি বাধা দিই। তারপর বাড়ির দিকে পা বাড়ালে আমার দিকে গুলি চালায় ওরা।’’ হোন্দল-সহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজু।
কে এই হোন্দল? শহরের ৮নম্বর ওয়ার্ডের লালডাঙা এলাকা সংলগ্ন আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা হোন্দলের আসল নাম প্রকাশ মান্না। ২০১০ সালের আগে শহরে ছোটখাটো চুরি-ছিনতাইয়ে সে যুক্ত ছিল। পরে দুষ্কৃতী পি বিক্রম রাওকে খুনের অভিযোগ ওঠে হোন্দলের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হলেও জামিন পেয়ে যায় সে। পরবর্তী কালে খরিদায় একটি সোনার দোকানে চুরি করতে এসে খুনের ঘটনায় নাম জড়ায় হোন্দলের। একাধিকবার গ্রেফতার হলেও বেশিদিন হোন্দলকে ধরে রাখা যায়নি। এখন এই দুষ্কৃতী তৃণমূলের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। বিজেপির শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশেই এই হামলা হয়েছে। যাঁদের নাম উঠে আসছে তাঁরা তো তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত।’’ কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাস আর সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলও এই ঘটনার পিছনে রাজনীতিই দেখতে পাচ্ছেন।
এ দিন সন্ধ্যায় ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল বাদে বাকি রাজনৈতিক দলের কাউন্সিলররা থানায় জমায়েত করে পুলিশি সক্রিয়তা এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। আজ, সোমবার বাম-কংগ্রেস-বিজেপি বৈঠক করে ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। যদিও তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর বক্তব্য, “রাজু গুপ্তর সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আমি ওঁকে অভিযোগ করতে বলেছি। বিজেপি যদি এ ক্ষেত্রে তৃণমূল যোগ খোঁজার চেষ্টা করে তবে সেটা রাজনৈতিক কারণে করছে। আমাদের সঙ্গে দুষ্কৃতী যোগের প্রশ্নই ওঠে না।’’
পেশায় কেবল নেটওয়ার্কের ব্যবসায়ী রাজু আগে কংগ্রেস করতেন। ২০১০ সালের পুরভোটে কংগ্রসের টিকিটে লড়ে হেরে যান তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে রাজু বিজেপি ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এ বারের পুরভোটে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় রাজুর স্ত্রী সুনীতাকে প্রার্থী করে বিজেপি। তিনি জিতেও যান। রাজুর উপরে হামলার পরে তাই শুরু হয়েছেরাজনৈতিক চাপানউতোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy