মগ্ন: মিনি লাইব্রেরিতে বই পড়তে ব্যস্ত আবাসিকরা। নিজস্ব চিত্র
বাঁটুল দি গ্রেট থেকে নন্টে ফন্টে, আব্দুল কালামের জীবনী থেকে রহস্য গল্প— হাত বাড়ালেই বন্ধু ‘বই’!
‘মিনি লাইব্রেরি’তে গল্প, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমনই হরেক রকম বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে আদিবাসী আবাসিক পড়ুয়ারা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর পরিচিলিত আদিবাসী আশ্রম ছাত্রাবাস ও আশ্রম ছাত্রীনিবাসের পড়ুয়াদের জন্য গড়ে উঠেছে এই গ্রন্থাগার।
জেলার ৫২টি স্কুল লাগোয়া আদিবাসী আশ্রম হস্টেলের প্রতিটিতে একটি করে ‘মিনি লাইব্রেরি’ তৈরি করতে মোট খরচ হয়েছে ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। দফতরের টাকায় হস্টেলের ঘরেই বইয়ের আলমারি, চেয়ার ও টেবিল দিয়ে সাজিয়ে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ‘মিনি লাইব্রেরি’। এই ৫২টি আদিবাসী আশ্রম হস্টেলের মধ্যে ২৬টি প্রাথমিক পড়ুয়াদের। বাকিগুলি মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য।
অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিক পড়ুয়াদের হস্টেলগুলিতে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ১৬০টি বই। মাধ্যমিক স্তরের হস্টেলগুলিতে অবশ্য দেওয়া হয়েছে ১০৩ ধরনের বই। অবসর সময়ে প্রাথমিকের পড়ুয়ারা পঞ্চতন্ত্র, কথামালা, বিক্রম-বেতাল-এর মতো বইয়ের পাশাপাশি, হাঁদাভোদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে ফন্টের মতো বাংলার ধ্রুপদী কমিকস্ও পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের জীবনীর মতো বই।
গ্রন্থাগার পেয়ে খুশি নয়াগ্রামের রাজকিশোর মুর্মু, জামবনির সাবিত্রী হাঁসদাদের মতো আবাসিক পড়ুয়ারা। তাদের কথায়, “আমরা গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ে। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হস্টেলে নিখরচায় থেকে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছি। গল্পের বই আমাদের কাছে কেনাটা বিলাসিতার মতো। এখন সেই অভাবও পূরণ হল।”
একাংশ পড়ুয়ার অবশ্য বক্তব্য, বইয়ের সংখ্যা আর একটু বেশি হলে ভাল হত। সরকারি সূত্রে ব্যাখ্যা, প্রতিটি ছাত্রাবাসে গড়ে ৩০-৫০ জন পড়ুয়া থাকে। ফলে প্রত্যেক আবাসিক পড়ুয়া একাধিক বই নিয়ে পড়তে পারবে।
অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওই ৫২ ছাত্রাবাসের পাশাপাশি, গড়বেতা-৩ ব্লকের নয়াবসত এলাকার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য দু’টি মিনি লাইব্রেরি করে দেওয়া হয়েছে।
জামবনি ব্লকের কাপগাড়ি সেবাভারতী বিদ্যায়তনের লাগোয়া দু’টি মাধ্যমিকস্তরের আশ্রম হস্টেল রয়েছে। দু’টিতেই ২০ জন করে আবাসিক পড়ুয়া থাকে। একটি ছেলেদের, অন্যটি মেয়েদের। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত পড়িয়া বলেন, “দু’টি হস্টেলের ৪০ জন পড়ুয়ার জন্য দু’টি মিনি লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই দেওয়া হয়েছে। ঝকঝকে সব বই দেখে পড়ুয়াদের মধ্যে গল্পের বই পড়ার আগ্রহ বাড়ছে।”
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক পুষ্পেন্দু সরকার বলেন, “হস্টেলের মিনি লাইব্রেরিগুলিতে বেশির বই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। প্রকল্পের কিছু উদ্বৃত্ত টাকা রয়েছে। সেই টাকাও আরও কিছু বই কিনে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy