Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

মামলা-জট, বোর্ড গঠনে পিছিয়ে পড়ল শাসক দল

রেলশহরে পুরবোর্ড গঠনে পিছিয়ে পড়ল তৃণমূল। সম্প্রতি একটি মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জহরলাল পাল শপথ নিতে পারলেও ভোটাভুটিতে যোগ দিতে পারবে না। ফলে, উজ্জ্বল হয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের পুরবোর্ড গঠনের সম্ভাবনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

রেলশহরে পুরবোর্ড গঠনে পিছিয়ে পড়ল তৃণমূল। সম্প্রতি একটি মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জহরলাল পাল শপথ নিতে পারলেও ভোটাভুটিতে যোগ দিতে পারবে না। ফলে, উজ্জ্বল হয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের পুরবোর্ড গঠনের সম্ভাবনা। তবে তৃণমূলও বিরোধী ভাঙিয়ে পুরসভার দখলের শেষ চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা।

সদ্য সমাপ্ত পুর-নির্বাচনে খড়্গপুর পুরসভার ৩৫টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূল ১১টি করে আসন পেয়েছে। ৭টি আসনে জিতেছে বিজেপি আর বামেদের দখলে গিয়েছে ৬টি আসন। এই পরিস্থতিতে এক জন কাউন্সিলর ভোটাভুটিতে যোগ দিতে না পারলে তৃণমূলের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১০-এ। তৃণমূল যাতে কোনও ভাবে বোর্ড গড়তে না পারে সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বামেরাও। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “তৃণমূল যাতে বোর্ড গড়তে না পারে সেই চেষ্টা চালাচ্ছি। কংগ্রেসের আবেদন ভাবনাচিন্তার পর্যায়ে রয়েছে। বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেই সিদ্ধান্ত নেব।’’

তবে নিজেদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি বিজেপি। এই অবস্থায় বিজেপি কাউন্সিলরদের ভাঙানোর চেষ্টাই তৃণমূল করবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। বিজেপি কাউন্সিলর পূজা নায়ডুর স্বামী রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর সঙ্গে তৃণমূল কাউন্সিলর জহরবাবু জেলে গিয়ে দেখাও করেছিলেন। আর তারপরই জামিন পেয়ে যায় শ্রীনু। তবে তৃণমূলকে সমর্থনের কথা এখনও জানাননি পূজা। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়েরও দাবি, “আমাদের কাউন্সিলরেরা আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরা অন্য দলের কাছে মাথা নত করবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’’

কিছু দিন আগে তৃণমূল কাউন্সিলর জহরবাবুর বিরুদ্ধে জেলা আদালতে মামলা করেন তাঁর ওয়ার্ডেরই এক বাসিন্দা। মামলাকারীর দাবি, জহরবাবু মনোনয়ন পেশের সময় যে তথ্য দিয়েছেন তা ঠিক নয়। এরপরই গত ১১মে মেদিনীপুর আদালত জহরবাবুকে জয়ী ঘোষণার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন জহরবাবু। শুক্রবার হাইকোর্ট জানিয়েছে, ওই তৃণমূল কাউন্সিলর শপথ নিতে পারলেও বোর্ড গঠনের সময় ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। সেই নির্দেশের প্রতিলিপি পেয়েছেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “হাইকোর্ট জানিয়েছে, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী শপথ নিতে পারলেও পুরবোর্ডের ভোটাভুটিতে যোগ দিতে পারবে না। ২৬মে-র মধ্যে বোর্ড গঠনের কাজ করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। আমরা সেই মতো পরিকল্পনা করছি।’’ জহরবাবুর মামলায় দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলা আদালতকে রায় দিতেও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

এরপরেই খড়্গপুর পুরসভায় দেখা দিয়েছে নতুন সমীকরণ। বিজেপি এ ক্ষেত্রে তৃণমূলকে সমর্থন করলেও বিজেপির এক জন কাউন্সিলরের অনুপস্থিত থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই অবস্থায় বোর্ড গঠন থেকে তৃণমূল পিছু হটতে পারে বলেও রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা। শনিবার জহরবাবু বলেন, “আদালত চূড়ান্ত রায় না দিলে আমি বোর্ড গঠনের ভোটে নিজেই যোগ দেব না বলে ঠিক করেছি।’’ স্বাভাবিক ভাবেই বোর্ড গঠনে প্রত্যয়ী কংগ্রেস শিবির। প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য তথা বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “আমরা বোর্ড গঠনে লড়াই করব। আর লড়াই মানেই জয়ের আশা নিশ্চয় থাকবে।’’ যদিও এত কিছুর পরেও তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর দেবাশিস চৌধুরীর বক্তব্য, “আমি মনে করি কোনও দল বোর্ড গঠনের চেষ্টা করলে আমরা কেন চেষ্টা করব না।’’ কিন্তু জহরবাবু তো ভোটাভুটিতে যোগ দিতে পারবেন না? এ বার দেবাশিসের জবাব, “এই বিষয়ে আমরা আইনি পথেই লড়াইয়ের ভাবনাচিন্তা করছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE