প্রতীকী ছবি।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে রয়েছে ‘সকলের জন্য বাড়ি’ প্রকল্প। বাড়ি তৈরির মোট খরচ ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা দেবেন উপভোক্তা। আর বাকি টাকা দেবে সরকার। এই প্রকল্পে দু’টি ঘর, একটি শৌচাগার ও একটি রান্নাঘর নিয়ে সর্বোচ্চ ৩৫০ বর্গফুটের বাড়ি তৈরির কথা। শহর এলাকায় প্রকল্পের অনুমোদন ও দেখভালের দায়িত্ব পুরসভার। নিয়ম ভাঙলে অনুমোদন বাতিলের দায়ও পুরসভার।
অথচ পুরসভাই নিয়ম ভেঙে এই প্রকল্পে বাড়ি করছে বলে অভিযোগ উঠল খড়্গপুরে। অনিয়ম হচ্ছে জেনেও ‘সকলের জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে এক উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে ফেলার জন্য টাকা বরাদ্দের প্রমাণও মিলেছে। খোদ উপ-পুরপ্রধান প্রভাব খাটিয়ে অনিয়মে প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে সামনে এসেছে। পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অনিয়ম নিয়ে সতর্ক করার পরেও টাকা বরাদ্দের জন্য উপ-পুরপ্রধান চাপ দিয়েছেন বলে পুরসভার এক নোটে ধরা পড়েছে। তাতে অনুমোদন দিয়েছেন পুরপ্রধানও। প্রথম পর্যায়ের টাকা বরাদ্দের পরেও টনক নড়েনি পুরসভার। দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা বরাদ্দের জন্য ফের সুপারিশ করেছেন উপ-পুরপ্রধান। তাতেও পুরপ্রধান অনুমোদন দিয়েছেন। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ টাকা আর উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়নি। আর উপ-পুরপ্রধানকে সতর্ক করেও শাস্তির মুখে পড়েছেন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচবেড়িয়ার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ কামরুজ্জামান প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সকলের জন্য বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তা। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেন। কাজ দেখে পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাহুল চক্রবর্তী গত ২২সেপ্টেম্বর নোটশিট জমা দেন। তিনি লিখেছিলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে সিঁড়ি-সহ প্রায় ৮০০ বর্গফুটের বেশি এলাকা জুড়ে বাড়ি হচ্ছে। বারবার স্থানীয় কাউন্সিলর তথা উপ পুরপ্রধান এবং ওই বাড়ির মালিককে সতর্ক করা হলেও বাড়ির কাজ এগোচ্ছে। তাই আর টাকা বরাদ্দ করা ঠিক হবে না। এর পরেও নিজ দায়িত্বে প্রথম পর্যায়ের ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দের অনুরোধ জানান উপ-পুরপ্রধান। ২২ সেপ্টেম্বরই তাতে সম্মতি দেন পুরপ্রধান।
এরপর গত ১৮ অক্টোবর আরও একটি নোটশিটে অনিয়মে প্রশ্রয় দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার জন্য অনুরোধ জানান উপ-পুরপ্রধান। তা পুরপ্রধানের বিবেচনার পাঠিয়ে দেন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। পুরপ্রধান দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দেন। এ নিয়ে শোরগোল পড়ায় দিন তিনেক আগে রাহুল চক্রবর্তীকে শো-কজ করা হয়েছে।
যে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অনিয়ম নিয়ে সতর্ক করলেন, তিনিই কেন শাস্তির মুখে পড়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উপ-পুরপ্রধান শেখ হানিফের দাবি, “শেখ কামরুজ্জামান ও তাঁর দাদা একসঙ্গে বাড়ি তৈরি করছেন বলে বর্গফুট সামান্য বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু এসব আমি কিছু বুঝিনি। বিশ্বাস করে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের লিখে আনা নোটশিটে সই করে দিয়েছি। যখন বুঝেছি, তখন দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা আটকে দিয়েছি।” উপভোক্তা কামরুজ্জামানেরও বক্তব্য, “আমার দাদা কিছু টাকা দেওয়ায় একসঙ্গে বাড়ি তৈরি করছি। তাই বাড়ির আয়তন কিছুটা বেড়েছে।”
কিন্তু অনিয়ম সত্ত্বেও পুরপ্রধান টাকা বরাদ্দ করলেন কী করে? পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের জবাব, “ভুল বুঝিয়ে রাহুল চক্রবর্তী আমাদের সই করিয়ে নিয়ে এ সব প্রচার করেছে। তাই তাঁকে শো-কজ করেছি। জবাব এখনও পাইনি।” সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাহুলবাবু এ দিন মুখ খোলেননি সংবাদমাধ্যমেও। ‘‘ব্যস্ত রয়েছি’’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy