Advertisement
১৯ মে ২০২৪
DA Case

ডিএ পেলে আসবেন! স্কুলে ঢুকতে বাধা শিক্ষকদের

কুলবনি হাইস্কুলে শুক্রবার ১৮ জন শিক্ষক আসেননি। এ দিন তাঁদের প্রথমে বিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ে আসেননি কেন জানতে চাওয়া হয়।

স্কুলেই বাইরেই আটকে শিক্ষকেরা।  মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউশনে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলেই বাইরেই আটকে শিক্ষকেরা। মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউশনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩৭
Share: Save:

শুক্রবারের ধর্মঘটের রেশ চলল শনিবারও। মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা শুক্রবারের ধর্মঘটে শামিল অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই শনিবার স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল। একাধিক স্কুলে ঝোলানো হল তালাও। ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুরের।

এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির কুলবনি হাইস্কুল, দাঁতনের নীমপুর বরঙ্গী হাইস্কুল, নারায়ণগড়ের মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউশন, রাধানগর হাইস্কুল-সহ একাধিক স্কুলে গন্ডগোল বাধে। কেন শিক্ষকেরা শুক্রবার বিদ্যালয়ে আসেননি, সেই কৈফিয়ত চাওয়া হয়। কোথাও আবার হাজিরা খাতায় সই করতে দেওয়া হয়নি শিক্ষকদের।

কুলবনি হাইস্কুলে শুক্রবার ১৮ জন শিক্ষক আসেননি। এ দিন তাঁদের প্রথমে বিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ে আসেননি কেন জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষকদের জবাবের প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয়রা অনেকে বলেন, ‘‘ডিএ পেলে তারপর বিদ্যালয়ে আসবেন।’’ শেষমেশ আলোচনায় সমস্যা মেটে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নন্দকিশোর দত্ত বলেন, ‘‘এ দিন গ্রামবাসী শিক্ষকদের স্কুলে ঢুকতে দেননি। পরে বিষয়টি মিটেছে।’’ দাঁতনের নীমপুর বরঙ্গী হাইস্কুলেও একই চিত্র দেখা যায়। শিক্ষকদের গেটেই আটকানো হয়। হাজিরা খাতায় সই করতেও দেওয়া হয়নি। শর্ত চাপানো হয়, আলোচনা না হলে হাজিরা খাতায় সই করতে পারবেন না শিক্ষকেরা। সোমবার বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন অভিভাবক ও গ্রামের মানুষ।

নারায়ণগড়ের মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউটে আবার দু’টি গেটেই তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন এলাকার মানুষ। চারটে পর্যন্ত গেটের বাইরে বসেছিলেন শিক্ষকেরা। ফলে, এ দিন ক্লাস হয়নি। গেট বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের ফিরতে হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, অকথ্য গালিগালাজ করা হয় তাঁদের। যাঁরা শুক্রবার বিদ্যালয়ের আসেননি, তাঁদের ‘শাস্তি হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। শাস্তি হিসেবে একমাস বা দু’মাসের বেতন কেটে নেওয়ার কথাও বলা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার মান্না বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ে ১০-১২ জন শিক্ষক নেই। শূন্য পড়ে আছে। বিদ্যালয় চালানো যায় না।’’ রবিবার বিকেলে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে না এলে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এলাকার মানুষ। পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও ফল হয়নি বলেই অভিযোগ। নারায়ণগড়ের রাধানগর হাইস্কুলেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।

কেশপুরের ঝাটিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দিন সকালে শিক্ষকেরা স্কুলে এলে তৃণমূলের কয়েকজন তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ আসে। যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। সবংয়ের দশগ্রাম হাইস্কুলে শিক্ষকেরা ঢোকার চেষ্টা করলে গেট আটকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধান বলেন, ‘‘শুক্রবার আমি ও এক শিক্ষাকর্মী এসেছিলাম। বাকি শিক্ষকেরা আসেননি। এ দিন স্কুলে ঢোকার সময় তাই শিক্ষকদের আটকায় স্থানীয়রা। তাঁদের বুঝিয়ে বলার পরে ছেড়ে দেয়। তারপর ক্লাস হয়েছে।’’

দাসপুরের নাড়াজোল চক্রের বুলুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তালা ঝুলিয়েছিলেন গ্রামবাসী। স্কুলে এ দিন প্রায় একশো ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। শিক্ষকরাও পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা দেখেন, স্কুলের মূল গেটে দুটো তালা ঝুলছে। গ্রামবাসী ও শাসকদলের সমর্থকরা এসে শিক্ষকদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। ছাত্র-ছাত্রীদেরও বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় মিড ডে মিল রান্না। স্কুলের এক শিক্ষক শুভ্রাংশু পড়িয়া বলেন, ‘‘ধর্মঘটে শুক্রবার স্কুল বন্ধ ছিল। তাই শনিবার স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সাড়ে বারোটার পরে আমরা স্কুলে ঢুকতে পারি। তবে ক্লাস হয়নি।’’

কিন্তু এই বাধাদানের ফলে তো এ দিনও পঠনপাঠন ব্যাহত হল! এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘অনেক সচেতন মানুষ দেখেছেন শিক্ষকেরা অনেকটাই সচ্ছল। তাঁরা যদি ছাত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার জন্য স্কুল কামাই করেন, তার প্রতিবাদ করার অধিকার অভিভাবকদের আছে।’’ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্ব তথা শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী পাল্টা বলেন, ‘‘আমরা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে এর তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করার অধিকার আমাদের রয়েছে।’’ মদনমোহনচক হাইস্কুল-সহ বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকদের হেনস্থার প্রতিবাদে নারায়ণগড় থানায় এ দিন মঞ্চের তরফে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। শিক্ষকদের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়।

এ দিন ঝাড়গ্রাম জেলায় আদিবাসী সংগঠনের বন্‌ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলে বেশ কিছু স্কুল বন্ধ ছিল। শহরের অধিকাংশ স্কুল খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DA Case Protest Government Employees
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE