কচুরিপানায় মজেছে খাল। নিজস্ব চিত্র
বাৎসরিক জলবন্দি দশা থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন ডেবরা ও পাঁশকুড়া ব্লকের বাসিন্দারা। সেই কারণে তাঁরা চাইছেন, ক্ষীরাই-বাকসি সেচ খাল দ্রুত সংস্কার করা হোক। সংস্কারের বিষয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন সেচমন্ত্রীও।
প্রতি বছর দু’এক দিনের টানা বৃষ্টিতে ডেবরা ও পাঁশকুড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। ব্যাপক ক্ষতি হয় পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রাধামোহনপুর, গোবিন্দনগর, চৈতন্যপুর, ঘোষপুর, হাউর এলাকার আমন, ফুল ও আনাজ চাষের। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছেন এলাকার চাষিরা। অন্যদিকে কংসাবতী নদীর জল বেড়ে গেলে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও ভয়াবহ। কখনও বর্ষার জল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক পার করেও বইতে থাকে।
ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতার বহু আগে এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্রিটিশরা ডেবরার আষাড়ি থেকে ময়নার রামচন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্ষীরাই খালটি খনন করে। অন্যদিকে পিংলা থানার রাগপুর থেকে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকসি খালটি খনন করা হয়। সেটি পাঁশকুড়ার রাধাবন এলাকায় ক্ষীরাইয়ের সঙ্গে মিশেছে। ক্ষীরাই এবং বাকসি, দুই খালই এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে নদী হিসেবে পরিচিত। বাকসি খালের মাধ্যমে পিংলা থানার গোবর্ধনপুর, পিণ্ডরুই গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বর্ষার জল ক্ষীরাইয়ে মিশত। দুই মেদিনীপুরের নিচু এলাকার বর্ষার জল এই দু’টি খাল বেয়েই পড়ত কংসাবতীতে।
কিন্তু সংস্কারের অভাবে খাল দু’টির জল ধারণ ক্ষমতা কমেছে। তাতে বর্ষার জল বেরতে বহু সময় লেগে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে চাষবাসের। ১৯৮০ সালে বামফ্রন্ট সরকারের ক্ষুদ্র সেচ দফতরের মন্ত্রী তথা পাঁশকুড়ার বাসিন্দা ওমর আলির উদ্যোগে ক্ষীরাই-বাকসি বেসিন প্রকল্পে খাল দু’টির সংস্কারের উদ্যোগ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ময়নার রামচন্দ্রপুর থেকে লক্ষ্যাগুড়ি পর্যন্ত নদীর ৮ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করা হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। খাল দু’টির আর সংস্কার হয়নি। রাতুলিয়া দলবাড় গ্রামের কৃষক শিলাদিত্য মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রায় প্রত্যেক বছরই মাঠে বর্ষার জল জমে গিয়ে আমন চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষীরাই খাল সংস্কার না করা হলে আমরা বর্ষায় চাষ করতে পারব না।’’ দুমদান গ্রামের কৃষক নারায়ণ প্রামাণিক বলেন, ‘‘ক্ষীরাই মজে যাওয়ায় প্রায় প্রতি বছরই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’’
সম্প্রতি সেচ দফতরের দায়িত্বে এসেছেন পাঁশকুড়ার বাসিন্দা সৌমেন মহাপাত্র। ক্ষীরাই-বাকসি সেচ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয় মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙন-খরা প্রতিরোধ কমিটি। তার সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘আমরা সেচ মন্ত্রীর কাছে এই নদী দু’টি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। উনি এলাকারই মানুষ। আশা করি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।’’
সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘ক্ষীরাই-বাকসি সেচ প্রকল্পটি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের আওতায় রয়েছে। তবে রাজ্য বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ করে নদী দু’টি দ্রুত সংস্কার করা হবে। আশা করি, আগামী অর্থবর্ষেই এই কাজে আমরা হাত দিতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy