কয়েকদিন আগে চিকিৎসার গাফিলতিতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে এক কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। রবিবার সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর বাড়িতে যান দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
দিন দু’য়েক আগেই রেলশহরে এসেছিলেন যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। বিজেপির ‘খাসতালুকে’ দাঁড়িয়েই বলেছিলেন, খড়্গপুরে আসেন না বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। রবিবার খড়্গপুর শহরের বোগদায় এসে যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সেই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন বিজেপি সাংসদ। একই সঙ্গে দিল্লি যাত্রা ও সংসদ হানায় বাংলা যোগ নিয়ে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র এলাকার অধীনে থাকা থানায় থানায় ঘেরাও কর্মসূচি হবে বলেও ঘোষণা করলেন তিনি।
রবিবার খড়্গপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ বলেন, “উনি (সায়নী) বলেছেন আমি না কি কোনওদিন এখানে আসি না। এমন কথা বললে এখানকার মানুষ ওঁকে বটগাছে বেঁধে রেখে দেবে। খড়্গপুরের লোকদের উনি চেনেন না। দিলীপ ঘোষ কোথায় আছে এসে দেখে যাক এখানে। একটা চা-ওয়ালা, সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন। এসে ভাষণ দিয়ে চলে গেল। আমার মনে হচ্ছে খড়্গপুরে গঙ্গাজল ছড়ানো উচিত।’’ সায়নীর নিরাপত্তা নিয়ে নিশানা করেছেন পুলিশকেও। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি যাত্রাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘‘রাজনীতি করতে দিল্লি গিয়ে কী লাভ। সোনিয়া গান্ধীও আজকাল ওঁর সঙ্গে দেখা করেন না।’’ তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে দেশের বিরুদ্ধে লাগাতার চক্রান্ত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ কী ক্রমে আফগানিস্তান হয়ে যাচ্ছে!’’
এদিন সকালে মেদিনীপুরের আমতলাতেও চা চক্রের আয়োজন করেছিল বিজেপি। যেখান থেকেও পুলিশকে নিশানা করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের কাজ কী? আমাদের সভা আটকানো। অনুমতি দেবে না। আমরা সভা করলে কেস দেবে। অনুমতি না নিয়েই সভা করব আমরা। দেখি কত কেস দেয়!’’ এরপরই থানা ঘেরাওয়ের ওই হুঁশিয়ারি দেন দিলীপের। খড়্গপুরে সায়নীর মিছিলের প্রসঙ্গ টেনে পুলিশের উদ্দেশে এদিন বিজেপি সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এত লোক এসেছে। বলুন, কবে অনুমতি নিয়েছে তৃণমূল?’’ মিছিলে মোদী, শাহের মুখোশ যারা পরেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। দিলীপের কথায়, ‘‘আমরা মেদিনীপুরে মিছিল করেছিলাম। অনুমতি নিয়েই। সেখানে আমাদের কয়েকজন নেতাকে সাজিয়েছিলাম। কেউ পার্থ সেজেছিল, কেউ কেষ্ট সেজেছিল। মুখোশ ছিল। মমতারও মুখোশ ছিল। মিছিল শেষে শুনি, মমতা, জ্যোতিপ্রিয় যারা সেজেছিলেন, তাদের পুলিশ ধরে।’’ এই সময়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে কু-কথাও বলতে শোনা যায় সাংসদকে। বিজেপি সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘‘একপক্ষ অন্যায় করবে, লুট করবে, তাদের গায়ে আঁচ পড়বে না। আমি এখানের সাংসদ। আমাকে সভা করতে দেবে না। থানা ঘেরাও হবে। দেখি আর কী করতে পারবি তোরা!’
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দিলীপকে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “দিলীপ ঘোষ দলে কোণঠাসা। পদ চলে গিয়েছে। এখন আশঙ্কা করছেন নব্য বিজেপির গুঁতোয় আগামী লোকসভায় টিকিট হয়তো পাবেন না। তাই নিজের টিআরপি বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে আসতে কু-কথা বলছেন।’’ যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তীর দাবি, খড়্গপুরে মিছিলের ভিড় দেখে বিজেপির লোকেরা ঘাবড়ে গিয়েছে।
রবিবার বেলদাতেও এক কর্মীর বাড়িতে বৈঠক করেন দিলীপ। সেখানে ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক ও মেদিনীপুর জেলা বিভাগের ইনচার্জ উমেশ রায়, জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত প্রমুখ। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলায় মণ্ডল সভাপতি ও ইনচার্জের দায়িত্বে নতুন মুখ এসেছে। তাঁদের সঙ্গে পরিচয়-সহ দলের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy