সরকারি ভাবে ধান কেনায় গতি আনতে এ বার লোকশিল্পীদের হাত ধরল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ট্যাবলো প্রচার। ট্যাবলোয় লোকশিল্পীরা থাকছেন। তাঁরা নাচে-গানে প্রচার করছেন, সরকারের ঘরে ধান বেচলেই চাষির লাভ। সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হচ্ছে, কোন ব্লকের কোথায় সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এই সব কেন্দ্রে এসে ধান বিক্রি করলে সরকার কুইন্টাল পিছু ২০ টাকা করে উত্সাহ ভাতা দেবে বলেও জানানো রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অনন্যা মজুমদার বলেন, “চাষিদের সচেতন করতেই এই প্রচার।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, সহায়কমূল্যে ধান কেনা নিয়ে সপ্তাহ খানেক আগে জেলায় বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, মহকুমাশাসক, বিডিও এবং বিভিন্ন দফতরের জেলা আধিকারিকেরা। জানা গিয়েছে, সরকারি ভাবে ধান কেনায় গতি নেই দেখে ওই বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জেলাশাসক। তিনি বুঝিয়ে দেন, এ রকম চলতে পারে না। অবিলম্বে এলাকায় গিয়ে চাষিদের সচেতন করতে হবে। জেলাশাসক এ-ও জানান যে চাষিদের সচেতন করতে এই লোকপ্রসার শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে।
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রে খবর, জেলাশাসকের নির্দেশ মতোই এই পদক্ষেপ। প্রশাসনের আশা, এই প্রচার সাড়া ফেলবে। সরকারি ভাবে ধান কেনায় গতি আনবে। জেলার চারটি মহকুমার প্রতিটিতে একটি করে ট্যাবলো বেরোবে। ট্যাবলোগুলো সংশ্লিষ্ট মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে ঘুরবে। বিশেষ করে যে সব ব্লকে ধান কেনার গতি কম, সে সব ব্লকে যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এ বার ধান ফলন স্বাভাবিক হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। জেলায় এ বার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে চার লক্ষ টন। অথচ, এখনও পর্যন্ত ৬০ হাজার টন মতো কেনা গিয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার দশ শতাংশের কিছু বেশি। এখন ধানের টাকা সরাসরি চাষিদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হচ্ছে। ধান কেনার জন্য প্রতিটি ব্লকে স্থায়ী কেন্দ্রও করা হয়েছে।
তাও কেন ধান কেনায় গতি নেই?
একাংশ চাষির অভিযোগ, সরকারের কাছে ধান বিক্রি করলে টাকা পেতে সময় লাগছে। তাই অনেকে আড়তদার এবং ফড়ের কাছে কম দামে ধান বেচে দিচ্ছেন। অথচ, খোলাবাজারে এখন ধানের দাম যেখানে প্রতি কুইন্ট্যাল ১১৫০-১১৬০ টাকা, সেখানে সরকারি সহায়ক মূল্য কুইন্ট্যাল প্রতি ১৪৯০ টাকা। আর কৃষি সমবায় সমিতিতে ধান বিক্রি করলে কুইন্টাল পিছু দাম মেলার কথা ১৪৭০ টাকা।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা মানছেন, “চাষিদের অনেকে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করছেন। চেষ্টা করেও ওঁদের বোঝানো যাচ্ছে না। আসলে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করলে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায়। তাই অনেকে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করছেন।”
এ ভাবে চললে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে তো?
জেলার খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়ের আশ্বাস, “সরকারি ভাবে ধান কেনায় গতি আনার সব রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
জেলার অন্য এক কৃষিকর্তার কথায়, “এ বার কিছুটা দেরি করে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। তাই এই পরিস্থিতি।’’ তবে ওই কর্তার আশা, “লোকশিল্পীদের প্রচারের এই উদ্যোগ আশা করি ফলপ্রসূই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy