নতুন সাজে সর্বমঙ্গলা মন্দির।
প্রাচীন ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। রয়েছে মন মাতানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও। তবু রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে আজও ব্রাত্য গড়বেতা।
মাওবাদী পর্বে অশান্তির আশঙ্কায় পর্যটকরা জঙ্গলমহল বিমুখ হন। মাওবাদী পর্ব এখন অতীত। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় ফের ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকেরা। ওই এলাকার পর্যটনস্থলগুলিকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। গড়বেতার কাছেই রয়েছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর। আবার হুগলির কামারপুকুর বা জয়রামবাটির দূরত্বও বেশি নয়। অথচ যে গড়বেতায় গনগনি, সর্বমঙ্গলা মন্দিরের মতো দেখার জায়গা রয়েছে, সেখানে উদ্যোগের অভাবে নষ্ট হচ্ছে পর্যটন সম্ভাবনা।
কেন? অভিযোগ, এ ব্যাপারে প্রশাসনিক উদাসীনতাই একমাত্র কারণ। প্রশাসন ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন এলাকাকে যেভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে, ততটা উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি গড়বেতা নিয়ে। তাই সম্ভাবনা থাকলেও পর্যটন শিল্পে গড়বেতা নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। যদিও মেদিনীপুরের মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তের কথায়, “গড়বেতাকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পর্যটন দফতর পদক্ষেপ করছে। পর্যটন দফতরের কছে আমরা জেলার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য স্থানের নাম পাঠিয়েছি, যেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। তার মধ্যে গড়বেতার নামও রয়েছে।”
মহকুমাশাসকের দাবি, গনগনিতে পিকনিক করতে আসা মানুষের যাতে অসুবিধে না হয় সে জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতকে দিয়ে সেখানে পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবু কেন মানুষের পছন্দের তালিকায় এখনও পিছনের সারিতে গড়বেতা। প্রশাসনিক কতার্রাই পরোক্ষে স্বীকার করছেন, এর প্রধান কারণ প্রচারের অভাব। পর্যটন দফতরের মাধ্যমে সেই প্রচারের কাজটি এ বার করতে হবে। গনগনির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রাচীন মন্দিরের কারুকার্য - ছবি সহ প্রচার করলে তবেই না মানুষ সেখানে যেতে আগ্রহী হবেন।
গড়বেতা বললেই প্রথমে আসে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কথা। সাধারণত হিন্দু দেবদেবীর মন্দিরের মুখ হয় দক্ষিণে। তবে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের মুখ উত্তর দিকে। কথিত আছে, মহারাজ বিক্রমাদিত্য সর্বমঙ্গলা মায়ের সামনে তপস্যায় বসেন। তাঁর তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে দেবী তাঁকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী করে দেন। সত্যিই কী বিক্রমাদিত্য সেই ক্ষমতা লাভ করতে পেরেছেন। কী ভাবে পরীক্ষা করবেন? প্রথমেই তাই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী তাল বেতালকে দিয়ে তা পরীক্ষা শুরু করেন। তাল বেতালকে নির্দেশ দেন মন্দিরের মুখ দক্ষিণ থেকে উত্তরে করতে। সঙ্গে সঙ্গে তাল বেতাল মন্দিরের মুখ পরিবর্তন করে দেন। সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ১২টি শিবের মন্দিরও। এখান থেকে কিছুটা এগোলেই রয়েছে বগড়ি কৃষ্ণ জিউ। যে মন্দির সম্পর্কেও রয়েছে নানা রূপকথা। তবে সংস্কারের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে মন্দিরের কারুকার্য।
পর্যটকদের পছন্দ গনগনির মনোরম প্রকৃতি। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
গড়বেতার একপাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী নদী। আর তার দু’পাশে রয়েছে জঙ্গল। জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালে বুনো হাতির দেখা মিলবেই। তবে শিলাবতীর ধারে থাকা গনগনির আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে সব থেকে বেশি। নদীর ধারে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয়েছে কিছু খাড়ি। তবে এই খাড়ির উৎপত্তি সম্পর্কেও রয়েছে নানা রূপকথা। জনশ্রুতি, এই এলাকাটি এক সময় নাকি ছিল বকাসুরের দখলে। ভীম বকাসুরকে বধ করেন। ভীম ও বকাসুরের লড়াইয়ের সময় দু’জনের পায়ের চাপে নাকি এই মাটি বসে গিয়ে এই খাড়ির জন্ম হয়েছিল।
মাওবাদী পর্বে পর্যটকেরা যখন ঝাড়গ্রাম বিমুখ হন, তখনই মাওবাদী প্রভাব মুক্ত জেলার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা নেয় সরকার। যার মধ্যে জেলার কর্ণগড়, পাথরা, বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ বা ক্ষুদিরামের জন্মভিটে কেশপুরের মোহবনিকে সেই মানচিত্রে ঢোকানোর পরিকল্পনা করা হয়। তখনই গড়বেতার কথাও উঠে আসে। তবে প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। গড়বেতার তৃণমূল নেতা অসীম ওঝার কথায়, “বিগত ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট সরকার এ সব নিয়ে কিছুই ভাবেনি। পর্যটনকে কেন্দ্র করেই গড়বেতায় অর্থনীতির অনেক উন্নতি হতে পারত। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এ বার সে বিষয়ে ভাবছেন। সেই কাজ দ্রুত রূপায়ণের জন্য আমরাও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy