Advertisement
১৯ জুন ২০২৪

কী ভাবে পড়াশোনা, চিন্তায় পুষ্প

স্থানীয় ছোটঝরিয়া গ্রামে বাবা-মা-বোনের সঙ্গে মাটির একচিলতে বাড়িতে থাকে পুষ্প।

পুষ্প দাস। নিজস্ব চিত্র

পুষ্প দাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াগ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

বাবা গ্রামে-গ্রামে সাইকেলে পাঁচ টাকা দামের কাঠি-আইক্রিম ফেরি করেন। পুষ্প দাসের লড়াইটা অভাবের সঙ্গে। কোনও গৃহশিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই লড়াই জিতেছে পুষ্প। নয়াগ্রাম ব্লকের কলমাপুকুরিয়া ভোলানাথ এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী পুষ্প দাস এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪২২ নম্বর। স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে সে।

স্থানীয় ছোটঝরিয়া গ্রামে বাবা-মা-বোনের সঙ্গে মাটির একচিলতে বাড়িতে থাকে পুষ্প। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করলেও এরপর স্নাতকস্তরে পড়ার খরচ চালানোর মতো সংস্থান নেই পুষ্পর বাবা জয়কৃষ্ণ দাসের। জয়কৃষ্ণ নিজে কোনও দিন স্কুলে পড়েননি। নামটুকু অনেক কষ্টে সই করতে পারেন। তাঁর স্ত্রী বেবি অবশ্য অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ, ঘর সংসার সামলান। জয়কৃষ্ণ বলেন, ‘‘মেয়েকে কোনও গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। এত কষ্টের মধ্যেও মেয়েটা যেভাবে সফল হয়েছে, তাতে গর্বে বুক ভরে উঠেছে। কিন্তু আইসক্রিম বেচে দৈনিক সাকুল্যে দেড়শো টাকা রোজগার করি। শীতকালে পাউরুটি ফেরি করি। মেয়েকে কলেজে পড়ানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা আমার নেই।’’ কীভাবে সংসার চলে? জয়কৃষ্ণ জানান, প্রতি সপ্তাহে রেশনে দু’টাকা কিলো দরে ৬ কিলো চাল আর ৩ প্যাকেট আটা পাই। তাতেই কোনও রকমে চলে। পুষ্প বাংলায় ৮৩, ইংরাজিতে ৯০, ইতিহাস ৮৫, দর্শন ৯০, সংস্কৃত ৭৪ পেয়েছে। ইংরেজি অনার্স নিয়ে স্নাতকস্তরে পড়তে চায় পুষ্প। তার কথায়, ‘‘এই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। তখনও কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা খুবই সাহায্য করেছেন। তাঁদের জন্যই এতদূর এগোতে পেরেছি। কন্যাশ্রী প্রকল্পে বার্ষিক সাড়ে সাতশো টাকা মেলে। ওই সামান্য টাকায় স্নাতক স্তরের সব বই কেনা সম্ভব নয়।’’

প্রধানশিক্ষক বীরসিং হেমব্রম বলেন, ‘‘পুষ্প খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। মাধ্যমিকের পরেই ওর পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চাইছিলেন অভিভাবকরা। আমরাই মেয়েটিকে সব রকম সাহায্য করে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়িয়েছি। কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে পুষ্প‌ের স্বপ্ন সফল হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE