জীর্ণ দশা বাঁশের সাঁকোরও। খড়্গপুরের বড়কলায়।
বর্ষায় দুর্ভোগের যাত্রা।
কোথাও পঞায়েত সমিতি আবার কোথাও বা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে তৈরি নদী ও খালের উপর তৈরি কাঠের সাঁকোগুলি বর্ষায় বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বারবার আশ্বাস সত্ত্বেও সাঁকো পাকা হয় না বলে অভিযোগ। জেলার অনেক এলাকায় এখনও কংক্রিটের সাঁকো তৈরি না হওয়ায় এ বার বর্ষাতেও দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার সব কাঠের সেতু পাকা করা হবে বলে জানান রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এ বারও আশ্বাসই সার হবে না তো? মন্ত্রীর জবাব, “কথা দিচ্ছি, সমস্ত কাঠের সেতু পাকা করে দেব। জেলায় কত কাঠের সেতু রয়েছে, তা জানতে চেয়েছি জেলা পরিষদের কাছে। তারপরই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এক এক করে কাজ শুরু হবে।”
গড়বেতা-১ ব্লকের খড়কুশমার কাছে শিলাবতী নদীর উপর কাঠের সেতু (লখাটা পোল) রয়েছে। এই সেতু দিয়েই সানমুড়া, বড়মুড়া, কোড়ুই, বাঁশদা, উত্তরবিল এলাকার মানুষ খড়কুশমাতে আসেন। বর্ষায় নড়বড়ে সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় কয়েক হাজার বাসিন্দাকে। স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ পাল, আসিফ আলিদের কথায়, “একটি পাকা সেতু হওয়া জরুরি। আমাদের এলাকায় সব্জি ও আলু চাষ হয়। সেতু না থাকায় ঘুরপথে আলু নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। তাতে খরচ বেশি হয়। নষ্ট হয় সময়ও।”
জীর্ণ দশা বাঁশের সাঁকোরও। খড়্গপুরের বড়কলায়।
মেদিনীপুর শহরের সঙ্গে খড়্গপুর-১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার যোগাযোগের জন্য রয়েছে অস্থায়ী বাঁশ ও কাঠের সেতু। আমতলা ঘাটের ওই সেতুটিও পাকা করার দাবি দীর্ঘদিনের। গোকুলপুরের বাসিন্দা অমর পাল, শেখ ইউসুফদের কথায়, “ঝুঁকি নিয়েই অস্থায়ী সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করি। তাও সাইকেল, মোটরবাইক ছাড়া কিছুই চলে না। গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে হলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ঘুরপথে চৌরঙ্গী হয়ে আসতে হয়। পাকা সেতু হলে ভাল হবে।”
জেলার ঘাটাল মহকুমাতে কুড়িটিরও বেশি নদী-খাল রয়েছে। জনবহুল এলাকায় একাধিক নদীতে সেতু তৈরিও হয়েছে। কিন্তু ঘাটালের মনসুকায় ঝুমি এবং চন্দ্রকোনায় কেশাডালে শিলাবতী নদীর উপর পাকা সেতু নেই। সেচ দফতর সূত্রে খবর, ঘাটাল মহকুমায় অনেক নদী বা খালের উপর কোথাও বাঁশের সাঁকো রয়েছে-কোথাও আবার তাও নেই। কিন্তু মহকুমার উল্লেখযোগ্য মনসুকার ঝুমি ও কেশাডালে শিলাবতী নদীর উপর সেতুর হাল কহতব্য নয়।
চন্দ্রকোনার কেশাডালে শিলাবতী নদীর উপর পাকা সেতু তৈরি হলে চন্দ্রকোনা থেকে হুগলির যোগাযোগও সহজ হবে। হুগলির গোঘাট থেকে চন্দ্রকোনা শহরে আসতে প্রায় কুড়ি-পঁচিশ কিলোমিটার রাস্তা কমে যাবে। একই অবস্থা ঘাটালের মনসুকাতেও। ঝুমি নদীর উপর শুধু ঘাটালের ওই এলাকার মানুষই নয়, সংলগ্ন হুগলি জেলার মানুষও নির্ভরশীল। স্থানীয় কৃষক হারাধন কোলে,গৃহবধূ মালবিকা সামন্ত বলেন, “সেতুটি তৈরি হলে শুধু স্থানীয় এলাকারই নয়,দুই জেলার মানুষেরই উপকার হবে। কমবে স্কুল ছুটের সংখ্যাও।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, ফি বছর স্থানীয় প্রশাসন নদীর উপর অস্থায়ী ভাবে কখনও বাঁশের কখনও বা কাঠের পাটাতন দিয়ে সেতু তৈরি করে। কিন্তু বর্ষায় জলের তোড়ে তা নষ্টও হয়ে যায়। ফলে জল কমার পর ফের সেতু তৈরি করে যাতায়াতের উপযোগী করতেও সময় লাগে। তখন সমস্যায় পড়েন দু’ই এলাকারই হাজার হাজার মানুষ। চন্দ্রকোনার বিধায়ক ছায়া দোলই এবং ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই দু’জনই সেতু দু’টির গুরুত্ব স্বীকার করে বলেন, “যাতে দ্রুত কাজ শুরু হয়-তার চেষ্টা করছি। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও আনা হয়েছে।”
এ নিয়ে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাকে দুই এলাকারই বিধায়করা বিষয়টা জানিয়েছেন। বর্ষা কেটে গেলেই দফতরের আধিকারিকদের পরিদর্শনের জন্য পাঠাব।” সেতু পাকা করা নিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “দ্রুত মন্ত্রীর কাছে পরিসংখ্যান ও প্রস্তাব পাঠাব। সেতুগুলি নির্মাণ হলে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy