ঝুঁকি: এ ভাবেই লাইন পারাপার করে চলে যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র
ঝড়ের গতিতে দুরন্ত এক্সপ্রেস ছুটে আসছে ডাউন লাইন দিয়ে। কিন্তু তর সইছিল না কিশোরটির। সাইকেল বগলদাবা করে দৌড়ে লাইন পেরল সে। কাজে সফল হয়ে মুখে তার বিজয়ীর হাসি!
অদূরেই রেল স্টেশন। সেখান থেকে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম-এ ঘোষণা চলছে অবিরাম— ‘বেআইনি ভাবে রেললাইন পারাপার করবেন না’। কিন্তু কে কার কথা শোনে! এমন ভাবেই উড়ালপুলের তলা দিয়ে রেললাইন পেরিয়ে নিত্য চলছে বেআইনি যাতায়াত। এই সমস্যা মেটাতে ঝাড়গ্রাম শহরের উড়ালপুলের কাছে সাবেক মেন রেল ক্রসিং এলাকায় পথচারী ও সাইকেল আরোহীদের জন্য একটি আন্ডারপাস তৈরির দাবি উঠেছে। এ ব্যাপারে রেল ও রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব।
দিন কয়েক আগেই রেললাইন পেরতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক স্কুল পড়ুয়ার। কিন্তু তার পরেও হুঁশ ফেরেনি অরণ্য শহরের বাসিন্দাদের। প্রতি দিনই দেখা যাচ্ছে নিয়ম ভাঙার চেনা ছবি। রেল সূত্রে খবর, বছর তিনেক আগে উড়ালপুল তৈরি হওয়ার পরে নতুনডিহির মেন রেলগেটটি তুলে দেওয়া হয়। ওই সময় থেকে রেলের নথিতে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে গেটটি। রেলের আইন অনুসারে সেখানে লাইন পারাপার নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, থলে হাতে হন্হন্ করে লাইন পেরচ্ছেন এক বৃদ্ধ। আপ লাইনের লোকাল ট্রেন তখন স্টেশন ছেড়েছে প্রায় তার ঘাড়ের কাছে! সামান্য বেসামাল হয়েও শেষমেশ লাইন পেরিয়ে নির্বিকার মানুষটি দিব্যি চললেন বাজারের পথে। সময় বাঁচাতে রোজই এমন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতাযাতে অভ্যস্ত শহরবাসীর অনেকেই। তার মাসুলও দিতে হয় মাঝেমধ্যেই। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই লাইন পেরতে গিয়ে গত তিন বছরে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। যদিও এই সব ঘটনায় শহরবাসীর সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
ঝাড়গ্রাম শহরে মেন রেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুল তৈরি হওয়ার পরে তার তলা দিয়ে বেআইনি লাইন পারাপার বন্ধে উদ্যোগী হয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। লাইনের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের দু’দিকে উঁচু পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সময় শহরবাসীর বিক্ষোভের জেরে দু’দিকের পাঁচিলের মাঝে খানিকটা ফাঁক রাখতে বাধ্য করা হয়েছিল রেলের ঠিকাদারকে। বাসিন্দাদের দাবিকে সমর্থন করেছিলেন শহরের কয়েক জন কাউন্সিলরও। তাঁদের যুক্তি, শহরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের মধ্যে সহজ যোগাযোগ ছিল মেন রেল ক্রসিং। শহরে এখন বামদা ও কদমকানন এলাকায় দুটি রেল গেট রয়েছে। কিন্তু ওই দু’টি রেলগেট দিয়ে গেলে অনেক ঘুরপথে যেতে হয় পথচারী বা সাইকেল আরোহীদের। শহরের দক্ষিণপ্রান্তে রয়েছে বাজার, স্কুল, কলেজ, ব্যাঙ্ক, অফিস, আদালত। আনাজ বাজারটি রয়েছে দক্ষিণ প্রান্তে উড়ালপুলের কাছে রেললাইন ঘেঁষে। ফলে উত্তর প্রান্তের বাসিন্দারা রেললাইন পেরিয়ে সহজে দক্ষিণ প্রান্তে যেতেই অভ্যস্ত। উত্তর প্রান্তের নতুনডিহির বাসিন্দা অভিষেক চৌধুরী, বাছুরডোবার দীপ্তি চক্রবর্তীদের বক্তব্য, অবিলম্বে উড়ালপুল লাগায়ো এলাকায় একটি আন্ডারপাস তৈরি করা খুব জরুরি। দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “পুরবাসীর দাবি যুক্তিসঙ্গত। এ ব্যাপারে আমরা রাজ্য সরকারের মাধ্যমে রেলের কাছে প্রস্তাব দেব।”
এ দিকে, দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “রেলের একার পক্ষে অবৈধ লাইন পারাপার বন্ধ করা সম্ভব নয়। তা বন্ধ করতে সর্বস্তরে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আন্ডারপাসের জন্য রাজ্যের তরফে প্রস্তাব এলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy