প্রকাশ্যেই চলে মদ্যপান। নিজস্ব চিত্র
পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে কংসাবতী। নদীর পাশে একফালি জায়গা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহে এখানেই গ়ড়ে উঠেছে নতুন ইকোপার্ক। দিন কয়েক পার্কে গিয়ে স্থানীয় উপপ্রধান অঞ্জন বেরা দেখেন, একপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ১০-১২টি মদের বোতল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আগের দিনই সেখানে পিকনিক করে গিয়েছে একদল ছেলে।
পিকনিক পার্টি চলে যাওয়ার পর সেখানে ঘুরঘুর করতে দেখা যায় বাইরের লোকজনকে। মদের বোতল কুড়িয়ে নেয় তারা। একটি ছোট বোতলে মেলে ১টাকা। মাঝারিতে ২। বড় হলে ৩। একটি পিকনিক দলের থেকেই গড়ে ১০-১২টি বোতল মেলে। উৎসবের মরসুমে বড় জায়গায় একেক দিনে ৩০-৪০টি দল পিকনিক করে। অনেক সময় পার্ক বা পিকনিক স্থলের রক্ষণাবেক্ষণকারীরাও খালি বোতল কুড়িয়ে রাখেন। তারপর! বোতল বেচার টাকায় সময় সুযোগ বুঝে পিকনিক।
পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের পিকনিকের জায়গাগুলির এটাই টুকরো ছবি। পিকনিকে মদ্যপান নতুন কোনও বিষয় নয়। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি কয়েক বছরে এই প্রবণতা বেড়েছে। আগে যা চলত লুকিয়ে এখন তা এসে পড়ছে প্রকাশ্যে। এরই হাত ধরে তৈরি হচ্ছে নতুন বিপদ। পিকনিকে মদ্যপানকে কেন্দ্র করে মাঝেমাঝে ঘটছে গোলমাল। প্রশ্ন উঠছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও।
শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়। তৈরি হচ্ছে অন্য সমস্যাও। মত্তদের দাপটে অনেকেই চেনা পিকনিক জায়গাগুলিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। খড়্গপুরের একটি কলেজের প্রথমবর্ষের এক পড়ুয়া বললেন, ‘‘বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছিলাম মেদিনীপুরের গোপগড়ে পিকনিকে যাব। কিন্তু বাড়ির অনুমতি পেলাম না। পিকনিক করার জন্য ওই জায়গা নাকি এখন আর নিরাপদ নয়। বিশেষ করে এই শীতকালে, উৎসবের মরসুমে।’’
মেদিনীপুর বড় পার্কগুলির অন্যতম হল গোপগড় ইকো পার্ক, ক্ষুদিরাম পার্ক। এ ছাড়াও বিদ্যাসাগর পার্ক,সুকুমার সেনগুপ্ত পার্কের মতো একাধিক ছোট পার্কও আছে। উৎসবের দিন হোক কিংবা ছুটির দিন। গোপগড়ের মতো পার্কে চার-পাঁচ হাজার পযর্টকের ভিড় হয়। গড়বেতা-গোয়ালতোড়ের গনগনি, পরিমল কানন, ধাদিকা, রুপারঘাগরা, সনকা পার্ক সহ বনাঞ্চলের একাধিক জায়গা গুলিতেও পিকনিক মরসুমে নিয়ম করেই ভিড় উপচে পড়ে। বাদ যায় না ঘাটালের হরিসিংহপুরের পার্ক, চন্দ্রকোনার ঢলবাঁধ,ধামকুড়ার থেকে খড়্গপুরের প্রেম বাজার ইকো পার্ক,মোহনপুরে কাঁসাই নদীর চর। অভিযোগ, প্রতি জায়গায় রয়েছে মত্তদের উপদ্রব। কোথাও কম। কোথাও বেশি।
ঝাড়গ্রাম জেলায় রয়েছে বহু পযর্টন কেন্দ্র ও পিকনিকের জায়গা। প্রকাশ্যে মদ্যপানের সমস্যা ঠেকাতে গতবছর থেকে বেলবাহাড়ির ঘাগরা, খাঁদারানি, তারাফেনি, চিল্কিগড়ের মতো পিকনিকের জায়গাগুলিতে পুলিশের নজরদারি শুরু হয়েছে। এ বার অবশ্য আরও কড়া পদক্ষেপ করছে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। কোথাও কোথাও আবার মদের দোসর গাঁজাও। বেশ কিছু ক্ষেত্রে পিকনিক পার্টিরা প্রকাশ্যেই বসায় গাঁজার আসর। সন্তানদের অভিভাবকেরা বলছেন, পিকনিকে সাবধান।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy