Advertisement
১৮ মে ২০২৪

শিক্ষক নেই, স্কুলে তালা ক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের

প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের দাবিতে স্কুলে তালা দিয়ে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না গোকুলনগর এলাকার রাধাবল্লভচক সারদাময়ী বিদ্যাপীঠের ঘটনা। অভিযোগ প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদটি খালি। শুধু তাই নয় অন্যান্য শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন ব্যহত হয় প্রতিদিন। অথচ কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। অভিযোগ বছর দেড়েক আগে প্রধান শিক্ষক অবসর নেওয়ার পর, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকও মাস চারেক আগে বদলি হয়ে গিয়েছেন।

বিক্ষোভে অভিভাবিকাও। —নিজস্ব চিত্র

বিক্ষোভে অভিভাবিকাও। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের দাবিতে স্কুলে তালা দিয়ে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না গোকুলনগর এলাকার রাধাবল্লভচক সারদাময়ী বিদ্যাপীঠের ঘটনা।
অভিযোগ প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদটি খালি। শুধু তাই নয় অন্যান্য শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন ব্যহত হয় প্রতিদিন। অথচ কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। অভিযোগ বছর দেড়েক আগে প্রধান শিক্ষক অবসর নেওয়ার পর, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকও মাস চারেক আগে বদলি হয়ে গিয়েছেন। ফলে এ বছর বার্ষিক পরীক্ষার মার্কশিট পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়নি। এমনকী ইতিহাস ও জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক না-থাকায় মধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে।

এ দিন স্কুলের অফিস ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রছাত্রীরা। ফলে স্কুলে ঢুকতে পারেননি শিক্ষক। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিকেলে প্রশাসনের তরফে প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। সমস্যার কথা স্বীকার করে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত কুমার মাইতি বলেন, ‘‘ময়নার ওই স্কুলের সমস্যাটি আমাদের নজরে এসেছে। সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

জেলা বিদ্যালয় দর্শক দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নার গোকুলনগর এলাকার রাধাবল্লভচক সারদাময়ী বিদ্যাপীঠ নামে ওই মাধ্যমিক স্কুলটি প্রায় ৫০ বছরের বেশী প্রাচীন। এখন স্কুলে প্রায় আড়াইশোর বেশী পড়ুয়া। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাসুদেব মাইতি বছর দেড়েক আগে অবসর নিয়েছেন। এরপর স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন স্বরূপ দাস অধিকারী। কিন্তু স্বরূপবাবু গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষক হয়ে হলদিয়ার একটি স্কুলে যোগ দেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদটিও শূন্য হয়ে যায়। এ ছাড়া, স্কুলে মোট আটটি ক্লাস থাকলেও শিক্ষক, শিক্ষিকা রয়েছেন মাত্র সাত জন। ফলে প্রতিদিন সব ক্লাসে শিক্ষক যেতে পারেন না। অথবা কোনও শিক্ষক ছুটিতে গেলে সমস্যা হয়। গত কয়েকমাস ধরেই এ ভাবে ওই স্কুলে পড়শোনা ব্যহত হচ্ছে বলে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ।

স্কুল পরিচালন সমিতির এক সদস্য স্বীকার করেন, ‘‘১২ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন মাত্র সাত জন। পড়াশোনা ব্যহত হচ্ছে।’’

এ দিন স্কুলে বিক্ষোভ দেখানো নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, স্কুলে ইতিহাস ও জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক নেই। ফলে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। আবার প্রধান শিক্ষক না থাকায় আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার মার্কশিট এখনও পাওয়া যায়নি। তাদের কথায়, ‘‘আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি।’’

এ দিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের এক আধিকারিক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অন্যত্র বদলি নিয়ে যাওয়ার আগে অন্য কাউকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়। এ ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতি নতুন কাউকে নিয়োগ না করেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বদলির ছাড়পত্র অনুমোদন করেছে। গত সাড়ে চার মাসেও নতুন কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। ফলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল।

সম্প্রতি স্কুলের স্টাফ কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হাজরা বেগম এ দিন সাফ বলেন, ‘‘আমাকে এখনও দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়নি। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করব না।’’ স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক দীপক মাপারু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘স্কুলে পরিচালন সমিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েই আগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বদলির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যাকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তিনি দায়িত্ব নিতে রাজি হননি।’’ তবে তিনি স্থায়ী অস্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টার আশ্বাস দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE