Advertisement
১৭ মে ২০২৪

কঠিন অঙ্ককে সহজ বলছে পদ্ম শিবির

২০১১ সালের পরিবর্তনের প্রবল  হাওয়াতেও কেশিয়াড়িতে উড়েছিল লাল পতাকা। জিতেছিলেন বাম প্রার্থী। সেই মাটিতেই লালের এখন অস্তিত্ব সঙ্কট। মাঝে জোড়াফুলের চাষ হওয়ার পরে আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় মাথা তুলছে পদ্মফুল। 

কেশিয়াড়িতে দেওয়াল লিখনে পিছিয়ে নেই কোনও পক্ষ। নিজস্ব চিত্র

কেশিয়াড়িতে দেওয়াল লিখনে পিছিয়ে নেই কোনও পক্ষ। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২১
Share: Save:

২০১১ সালের পরিবর্তনের প্রবল হাওয়াতেও কেশিয়াড়িতে উড়েছিল লাল পতাকা। জিতেছিলেন বাম প্রার্থী। সেই মাটিতেই লালের এখন অস্তিত্ব সঙ্কট। মাঝে জোড়াফুলের চাষ হওয়ার পরে আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় মাথা তুলছে পদ্মফুল।

সুবর্ণরেখা নদী ঘেঁষা কেশিয়াড়ি বিধানসভায় মধ্যে রয়েছে কেশিয়াড়ির ৯টি ও দাঁতন ১ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশিয়াড়ির ৫টি পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তারা। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বোর্ড এখনও হয়নি। বিজেপির দাবি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে বোর্ড গঠন আটকে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল অবশ্য মানতে নারাজ। তবে কেশিয়াড়ির মাটিতে যে পদ্ম চাষ হচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের কথায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, ‘‘বিজেপিকে আমরাই ডেকে এনেছি!’’

এ বার মেদিনীপুর লোকসভা জিততে তাদের বড় ভরসা হল এই কেশিয়াড়ি। পঞ্চায়েত ভোটের পরে এখানে সংগঠন আরও মজবুত করেছে বিজেপি। এখানে প্রচারে এসে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “কেশিয়াড়ি থেকে এত লিড দিন যাতে কোথাও কম পড়লেও আমাদের মার্জিন যেন কম না হয়। কেশিয়াড়ির সব বুথে আমরা লিড নেব।” গত পঞ্চায়েত ভোটের পরে কেশিয়াড়ির খাজরায় পান দোকানি বিভূরঞ্জন দাস খুন হয়েছিলেন। তাঁকে দলীয় কর্মী দাবি করেছিল তৃণমূল। পরে কেশিয়াড়িতে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিভূরঞ্জনের ছেলেকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সেই বিভূরঞ্জণের স্ত্রী সীমা দাস এখন বলছেন, “আমার স্বামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কারা তাঁকে মেরেছে তাও জানি না। স্বামীর খুনিদের শাস্তি ও ছেলের চাকরির স্থায়ীকরণ চাই।”

তবে ভোট পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে কেশিয়াড়িতে বিজেপির যাত্রাপথ কিন্তু গোলাপ বিছানো মনে হচ্ছে না। কারণ ২০১৪ সালের লোকসভা ও ২০১৬ সালের বিধানসভায় এই কেশিয়াড়ি থেকেই ৪০ হাজারের বেশি ভোটে ‘লিড’ পেয়েছিল তৃণমূল। যদিও স্থানীয় বিজেপি নেতারা পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলছেন, ২০১১ সালে কেশিয়াড়িতে ৪ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিল পদ্মফুল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে সেটাই ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। তবে ২০১৬ সালে বিজেপির ভোট কমে বামেদের ভোট কিছুটা বাড়ে। আবার গত পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য কেশিয়াড়ি ব্লকে সব দলকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। শুধু বাম নয়, এ বার তৃণমূলের অনেক ভোট তাদের দিকে এসেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের গলাতেও উঠে আসছে ‘এলাকায় বিজেপি হাওয়া’র কথা। কেশিয়াড়ি ব্লক অফিসের সামনেই পানের দোকান চালান অর্চনা মুখির। তাঁর কথায়, “এখন তো এখানে বিজেপির বেশি প্রভাব দেখছি।” দাঁতনের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গৌরীশঙ্কর মিশ্র আবার মনে করছেন, ‘‘দাঁতন ১ ব্লক থেকে তৃণমূল জিতবে। তবে কেশিয়াড়ি ব্লকে বিজেপির হাওয়া রয়েছে।’’

কেশিয়াড়ি জিততে দাঁতন ১ ব্লককেই পাখির চোখ করছে তৃণমূল। তবে কেশিয়াড়ির মতো অত ভাল না হলেও গত পঞ্চায়েত ভোটে দাঁতন ১ ব্লকেও কিন্তু পদ্ম ফুটেছে। একটি পঞ্চায়েত দখল করার সঙ্গেই কয়েকটি পঞ্চায়েত আসনেও বিজেপি জিতেছে। তবে দাঁতনের বিধায়ক তথা কেশিয়াড়ি বিধানসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা বিক্রমচন্দ্র প্রধানের দাবি করছেন, “দাঁতন ১ ব্লক থেকে ৩৫ হাজার লিড দিলেই কেশিয়াড়িতে লিড পাবো।”

পঞ্চায়েত ভোটের পরে কেশিয়াড়ির দিকে নজর দিয়েছিলেন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কেশিয়াড়িতে সভা করে এলাকা পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীকে। যদিও ভোট ঘোষণার পর থেকে কেশিয়াড়িতে সেভাবে সময় দিতে পারেননি শুভেন্দু। মালদহের পরে মুর্শিদাবাদেই ব্যস্ত তিনি। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভোটের এখনও দেরি আছে। শুভেন্দুর পরামর্শ মতোই সব কাজ হচ্ছে।

পঞ্চায়েত ভোটের পরে ব্লকের দুই তৃণমূল নেতা জগদীশ দাশ ও ফটিক পাহাড়িকে পিছনের সারিতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। লোকসভা ভোটের আগে ফের তাঁদের দলের দায়িত্বে আনা হয়েছে। দলীয় প্রার্থী মানস ভুঁইয়া প্রচারে এসে বার বার বলছেন, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী ভাই-বোনেদের জন্য প্রাণ ঢেলে উন্নয়নের কাজ করেছেন। যদি আমাদের ত্রুটি থাকে তো আমার ওপর রাগ করুন, এলাকার নেতাদের ওপর রাগ করুন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে সরবেন না।”

এই এলাকায় প্রায় ৬৮ শতাংশ তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই আদিবাসী ভোটে আস্থা রাখছে বিজেপিও। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটে আদিবাসী গ্রামে গিয়ে অভিযোগ শুনেছিলাম। সারা দেশের আদিবাসী সমাজ বিজেপির উপরে ভরসা করে। কেশিয়াড়ির মানুষও সে কথা বুঝেছেন।” আশায় রয়েছেন বাম প্রার্থী বিপ্লবও। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা আমাদের ভোট ধরে রেখে ভাল ফল করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE