Advertisement
২০ মে ২০২৪
Kharagpur

মাহির মনে এখনও রেলশহর

প্রায় ২০ বছরের ব্যবধান। রেলশহরে কর্মজীবন ছেড়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটে যোগ দিয়েছিলেন। পরেরটা ইতিহাস। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে হয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক।

Eden gardens flooded with CSK fans

ধোনির সমর্থনে রবিবারের ইডেন ছিল এমনই। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর, খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৪৪
Share: Save:

এ শহর জানে তাঁর প্রথম অনেক কিছু।

মাহির মোহে আবিষ্ট ইডেন থেকেই সেই রেলশহরে ফিরলেন তিনি। স্বপ্নের নায়ক নিমেষে ভোলালেন জমে থাকা অভিমান।

প্রায় ২০ বছরের ব্যবধান। রেলশহরে কর্মজীবন ছেড়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটে যোগ দিয়েছিলেন। পরেরটা ইতিহাস। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে হয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু এতগুলি বছরে রেলশহরে পা রাখেননি তিনি। দূর থেকেই তাঁর সাফল্য-ব্যর্থতার সঙ্গী থেকেছে রেলশহর। যদিও শহরের একাংশ বাসিন্দা থেকে বন্ধুদের অনেকের ধারনা ছিল রেলশহরকে ভুলেছেন তিনি। সেই ভুল ভাঙল রবিবার রাতে। হলুদ জার্সিতে ভরা ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন থেকে স্মৃতির সরণি বেয়ে খড়্গপুরে পৌঁছলেন রেলশহরের সেই ‘মাহি’ তথা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি! গ্যালারির উচ্ছ্বাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে ধোনি বললেন, “আমি কলকাতায় প্রচুর অনেক ক্রিকেট খেলেছি। তবে বলব না যে প্রচুর খেলেছি। কারণ আমি অনূর্ধ্ব ১৬ বা অনূর্ধ ১৯ খেলিনি। ফলে ম্যাচের সংখ্যা এমনিই কমেছে। তবে আমার বলতে ইচ্ছে করছে যে আমি খড়্গপুরে চাকরি করতাম। কলকাতা থেকে ২ঘন্টার দূরত্ব। ওখানে অনেক ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলও খেলেছি। মনে হচ্ছে যে এই ভালবাসা ওখান থেকেই এসেছে!”

ভালবাসা তো নয়। এ যেন ভালবাসার বিস্ফোরণ। রবিবারের বিকেল। ইডেনের ক্লাব হাউসের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কয়েকশো ছেলেমেয়ে। ধোনিকে দেখার অপেক্ষায়। গায়ে হলুদ জার্সি। হাতে পোস্টার। পোস্টারে লেখা, ‘লাভ ইউ ধোনি’। সন্ধ্যায় ইডেনের গ্যালারিতেও হাজার হাজার দর্শকের গায়ে চেন্নাইয়ের হলুদ জার্সি। ধোনির নামে জয়ধ্বনি। রবিবারই খড়্গপুর থেকে দলে দলে ক্রিকেটপ্রেমীরা গিয়ে ভরিয়েছিলেন ইডেনের গ্যালারি। কেউ ট্রেনে, কেউ সড়কপথে গিয়েছিলেন। খেলা শেষে মধুর অনুভূতি নিয়ে ফিরেছেন ট্রেনে। সোমবার ভোরের প্রথম লোকাল খড়্গপুরে দাঁড়াতেই প্ল্যাটফর্মও ভরেছিল হলুদ জার্সিতে। তাঁদের মধ্যেই তালবাগিচার রাহুল ভট্টাচার্য বলেন, “কেকেআরের জার্সি পরে গ্যালারিতে বসেছিলাম। খেলার মাঝে জার্সি বদল করে সিএসকের জার্সি পরি। তার আসল কারণ মাহি। যে ভাবে কালকে খড়্গপুরে ওঁর কাটানো সময় স্মরণ করল তাতে আপ্লুত। খড়্গপুর প্ল্যাটফর্মে দেখলাম প্রায় হাজার খানেক মানুষ হলুদ জার্সি পরে ট্রেন থেকে নামল।”

২০০১ সালে খড়্গপুর রেল ডিভিশনে টিকিট পরীক্ষকের কাজে যোগ দেওয়া ধোনি তাঁর বন্ধু-সহকর্মীদের কাছে ছিলেন ‘রিয়েল হিরো’। শহর জুড়ে একাধিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ধোনির হাত ধরেই একের পর এক জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তাঁর ক্রিকেট সঙ্গীরা। ২০০৪ সালে এই খড়্গপুর থেকে পাকাপাকি ভাবে ভারতীয় ক্রিকেট টিমে যোগ দেন। রেলশহরে ধোনির সবথেকে কাছের বন্ধু সত্যপ্রকাশ কৃষ্ণ। একসময়ে ঝাড়খণ্ডে একসঙ্গে রঞ্জি খেলে আসা সহকর্মী সত্যপ্রকাশের রেল কোয়ার্টারে একসঙ্গে থাকতেন ধোনি। এখনও দু’জনের যোগাযোগ রয়েছে। ধোনির বায়োপিকেও সত্যপ্রকাশের চরিত্র ছিল উজ্জ্বল। এখন সেই সত্যপ্রকাশ চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে গিয়েছেন মুম্বইয়ে আইপিএলের ভোজপুরী ধারাভাষ্য পাঠের কাজে। এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা হলে সত্যপ্রকাশ কৃষ্ণ বলেন, “দিন কয়েক আগে মুম্বই-চেন্নাইয়ের ম্যাচ চলাকালীন এক ঝলক মাহির সঙ্গে দেখা হল। কুশল বিনিময় করার সুযোগ পেয়েছিলাম শুধু। তবে আগে বহুবার ধোনির সঙ্গে কথা বলার সময় বুঝতাম খড়্গপুরকে ও ভোলেনি। আসলে এই খড়্গপুরই ওঁর প্রথম রুটির জোগান দিয়েছিল। সেই রুটির মর্ম মাহি জানে বলেই ইডেনে দাঁড়িয়ে খড়্গপুরের স্মৃতিচারণ করেছে। এটাই আমাদের মাহি!”

ইডেনে কি নিজের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন ধোনি? তাঁকে কুর্নিশ জানাতেই কি যে ইডেনের বেগুনি হয়ে ওঠার কথা ছিল, সেই ইডেন হলুদ হয়ে গিয়েছিল? জল্পনা রয়েছে। ম্যাচ শেষেও ইডেনের দর্শকদের ধন্যবাদ দিয়েছেন ধোনি। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘প্রচুর মানুষ হলুদ জার্সি পরে এসেছিলেন। হয়তো তাঁরাই আবার পরের দিন কেকেআরের জার্সি পরে খেলা দেখতে আসবেন। দর্শকেরা হয়তো আমাকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন। দর্শকদের অনেক ধন্যবাদ।’’ ইডেনে তিনি শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন কি না, সে নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি ধোনি।

স্বপ্নপুরী ইডেন থেকে রেলপথে অতীতে ফিরলেন মাহি। এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur MS Dhoni CSK
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE