আদিবাসীদের বিশেষ দিনে পূর্ণ দিবস ছুটি ঘোষণা মমতার।
মঙ্গলবারই ঝাড়গ্রামে সভা করে ঘাঘর ঘেরা কমিটির ৮টি কুড়মি সংগঠন ঘোষণা করেছিল, ‘দৌওদিয়াকে খৌওসিয়া’ (যে যেমন, তাকে তেমন) কর্মসূচি। করম, বাঁদনা ও মকর পরবে পূর্ণদিবস ছুটির দাবিও করেছিলেন কমিটির মুখপাত্র রাজেশ মাহাতো। বুধবারই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করম পরবের দিন পূর্ণ ছুটি ঘোষণা করলেন। সঙ্গে জানালেন, ৯ অগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসে রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রামে আসবেন তিনি।
কুড়মিদের করম পরবে মমতার সরকারই প্রথম ‘সেকশনাল হলিডে’ দেওয়া শুরু করে। তবে বিভিন্ন কুড়মি সামাজিক সংগঠনগুলির দাবি ছিল, জঙ্গলমহল তথা রাজ্যে কয়েক লক্ষ কুড়মি বাস করেন। ঝাড়খণ্ডেও করম পরবে পূর্ণদিবস ছুটি থাকে। তাই এ রাজ্যেও সেই দাবি ছিল। দাবি পূরণের পরে এ দিন কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর সভাপতি তথা ঘাঘর ঘেরা কমিটির মুখপাত্র রাজেশ মাহাতো বলছেন, ‘‘সমাজের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির স্বপক্ষে কমেন্ট ও জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট রাজ্যের তরফে কেন্দ্রে পাঠানো হলে আরও খুশি হব।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের ‘মূল মানতা’ (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতোও বলছেন, ‘‘অবশেষে বহু আকাঙ্ক্ষিত পূর্ণদিবস ছুটি দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ। এ বার কমেন্ট ও জাস্টিফিকেশন দিল্লিতে পাঠিয়ে দিলে আর ২০ সেপ্টেম্বর রেল অবরোধ করব না।’’
কুড়মিদের জাতিসত্তার আন্দোলনে অন্যতম দাবি ছিল এই ছুটিও। পঞ্চায়েতে সেই আন্দোলনকে সামনে রেখে কুড়মিরা ভোটেও লড়েন। তবে তাতে বেকাদায় পড়েনি তৃণমূল। বরং জঙ্গলমহলের কুড়মি ও আদিবাসী জনজাতির বৃহদংশের সমর্থন পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল। ভোট মিটতেই এ বার মুখ্যমন্ত্রী ছুঁয়ে গেলেন কুড়মি ও আদিবাসী, দুই আবেগই। লোকসভা ভোটের আগে বুঝিয়ে দিলেন, দুই সমাজই তাঁর কাছে সমান জরুরি।
পঞ্চায়েতে কুড়মিদের সমর্থন পাওয়ার প্রতিদান কি এই ছুটি? তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার অবশ্য দাবি, "আমরা ভোটের রাজনীতি করি না। কুড়মিদের অনেকেই ভোটে লড়েছিলেন। কিন্তু কুড়মি সমাজের অধিকাংশ আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন। তবে এর সঙ্গে তার কোনও যোগ নেই।"
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি চূড়ামণি মাহাতো বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কুড়মি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আমরাও করমে পূর্ণদিবস ছুটির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। উনি কথা রেখেছেন।’’ ২৫ সেপ্টেম্বর ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশীতে এ বারের করম পুজো। সে দিন ছুটি ঘোষণায় খুশির হাওয়া পুরুলিয়াতেও।পূর্বাঞ্চল কুড়মি সমাজের রাজ্য সম্পাদক শুভেন্দু মাহাতো, মানভূম কালচারাল আকাদেমির চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো, কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতো- সকলেই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এ দিন আদিবাসীদেরও প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। ৯ অগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসে ঝাড়গ্রামের অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন জানান। ৮৪৪টি সাঁওতালি শিক্ষকের পদ শীঘ্রই পূরণের আশ্বাস দেন। ঝাড়গ্রাম জেলার প্রতিটি ব্লকে একটি করে আবাসিক সাঁওতালি মাধ্যম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, সেখানে ইংরেজি বিভাগের ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি নৃত্যগীতের সার্টিফিকেট ডিপ্লোমা কোর্সের ঘোষণা করেন। ঝাড়গ্রাম বিএড কলেজে সাঁওতালি ভাষার অনুমোদনের কথা জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy