ভগ্ন ঘরেই দিন কাটে।
তাঁদের অনেকেই আদতে পড়শি রাজ্যের বাসিন্দা। পড়শি রাজ্যের সরকারি জাতিগত শংসাপত্রও রয়েছে তাঁদের। কিন্তু বিয়ের সূত্রে তাঁরা কয়েক দশক ধরে এই রাজ্যের বাসিন্দা। কিন্তু সমস্যা হল, পড়শি রাজ্যের জাতিগত শংসাপত্র এ রাজ্যে গ্রাহ্য হয় না। ফলে তফসিলি জাতির মানুষ হয়েও, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে বাঁশ আর কঞ্চির বেড়া দেওয়া ত্রিপলের ছাউনির জীর্ণ কুঁড়েতেই দিন কাটে ওঁদের। পরদিনের অন্ন সংস্থানের চিন্তায় কাটে বিনিদ্র রাতও। আর বিদ্যুতের আলো? সে তো বিলাসিতা ওঁদের কাছে।
চিত্রটা ওড়িশা লাগোয়া এগরার জুমকি গ্রাম পঞ্চায়েতে খাদিকুল গ্রামের। এই গ্রামেই প্রায় শতাধিক তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষের বাস। পেটের টানে তাঁদের অনেকেই বহু দশক আগে ওড়িশার সীমানা পেরিয়ে এ রাজ্যে চলে আসেন। দীর্ঘ সময় এ রাজ্যে বসবাস করায়, তাঁরা ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দার পরিচিতি পেয়েছেন। পরিচিতি মিললেও, মেলেনি সরকারি প্রকল্পের ছিঁটেফোঁটাও। আবার জানা যাচ্ছে, এই গ্রামের অধিকাংশ আদিবাসী যুবকেরাই পড়শি রাজ্যের তথা ওড়িশার তরুণী বা যুবতীদের বিয়ে করেন। কিন্তু ওই তরুণীদের বাপের বাড়ির জাতিগত শংসাপত্র এই রাজ্যে প্রশাসনিক ভাবে গৃহীত হয় না। আর সমস্যাটা এখানেই।
শংসাপত্র না থাকায় সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তো বটেই, তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনার জন্য সরকারি বৃত্তির টাকা পায় না। বাম আমলে আবাস যোজনায় কয়েকটি বাড়ি তৈরি হয়েছিল। তারপর দশক পেরোলেও, নতুন করে আবাস যোজনার বাড়ি বরাদ্দ হয়নি এই জনজাতি পরিবারগুলির জন্য। কার্যত দিনমজুরি ও জঙ্গলে শিকার করে কোনও মতে দু’বেলা খাবার জোটে। প্রতিটি পরিবারের ঝুপড়ি বাড়ির অবস্থা জীর্ণ ও ভগ্নপ্রায়। সবচেয়ে করুণ অবস্থা রামচন্দ্র মাণ্ডি ও রতন টুডুর। ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া জীর্ণ কুঁড়েতে কোনও মতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে দিন কাটে ওঁদের। আর রাতে প্রবল বৃষ্টির হলে, এক বিছানায় সকলে জড়ো হয়ে বসে মাথার উপরে কোনও রকমে পলিথিন টাঙিয়ে রাখেন। রামচন্দ্রের দুই ছেলেমেয়ে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিলে পেট পুরে খেতে পায়, এটাই স্বস্তি বাবা ও মায়ের। রাতে রাস্তার থাকা বিদ্যুতের খুটির আলোয়, খাওয়া-দাওয়া সেরে নেন ওঁরা। রামচন্দ্রের স্ত্রী চম্পার জাতিগত শংসাপত্র ওড়িশার হওয়ায় মেলে না লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা। একই অবস্থা লক্ষ্মী, গীতাদেরও।
গ্রামের যুবক আশিস হাঁসদার কথায়, ‘‘আমারা প্রশাসনিক দফতরে ঘুরে ঘুরে হতাশ হয়ে গিয়েছি। কেউ কাজ করে দেয় না। নিজের দেশেই প্রায় জীবজন্তুর মতো বসবাস করছি।’’ এ বিষয়ে এগরার মহকুমাশাসক সম্রাট মণ্ডল বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy