সামনেই বর্ষা। তার আগেই আশ্রয় কেন্দ্র অর্থাৎ ‘ফ্লাড শেল্টার’গুলোর কাজ শেষের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। ২৩টি ফ্লাড শেল্টারের মধ্যে ৯টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৪টির ক্ষেত্রে গড়ে কাজ হয়েছে ৭৮ শতাংশ। ২২ শতাংশ বাকি কাজই বর্ষার আগে শেষের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক সত্যব্রত হালদার বলেন, “নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শেষ হবে। জেলা থেকে নজরও রাখা হচ্ছে।’’
আগে পশ্চিম মেদিনীপুরে কোনও ফ্লাড শেল্টার ছিল না। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৩-১৪ আর্থিক বর্ষে ৯টি ফ্লাড শেল্টার তৈরির নির্দেশ আসে। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে আরও ১৪টি ফ্লাড শেল্টার তৈরির নির্দেশ আসে। বন্যার আগে আগাম সতর্কতা আসার কথা। তবে অনেক সময়ই তা আসে না। ফলে, জলমগ্ন এলাকায় বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন। ফ্লাড শেল্টার থাকলে অন্তত মাথার গোঁজার ঠাঁই পেতে হয়রান হতে হবে না।
ফি বছরই জেলার একাংশে বন্যা হয়। বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বহু মানুষ নিরাশ্রয় হন। কেউ স্থানীয় স্কুল, কেউ বা ক্লাবঘরে আশ্রয় নেন। ২০১৩ সালের বন্যাতেও জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে কমবেশি ২৬টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফ্লাড শেল্টার না থাকায় সে বার ১০৪টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়। স্কুল, ক্লাবেই শিবিরগুলো চালু হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডেকে পাঠানো হয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। রাজ্য অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্ধারকারী দলও কাজ করে। নৌকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনো হয়। এরপরই জেলার বন্যাপ্রবণ বলে পরিচিত এলাকাগুলোয় ফ্লাড শেল্টার তৈরির দাবি আরও জোরাল হয়।
এক একটি আশ্রয় অন্তত ২০০ জন থাকতে পারবেন। গবাদি পশু রাখার জন্য পৃথক ঘর, রান্নাঘর, শৌচাগারও থাকবে। বর্ষা বাদে বছরের অন্য সময় এই সব আশ্রয় কেন্দ্রগুলি অন্য কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। সে রকম পরিকাঠামো থাকবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এক কথায় ফ্লাড শেল্টারগুলো বহুমুখী কাজেও ব্যবহার করা যাবে।’’ এক একটি শেল্টার তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৫০ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে সাঁকরাইল, বিনপুর ২, ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর ১, কেশপুর, দাঁতন ১, দাসপুর ১, ঘাটাল প্রভৃতি ব্লকে ফ্লাড শেল্টার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের ওই আধিকারিক বলেন, “ফ্লাড শেল্টার তৈরি হওয়ার ফলে সুবিধেই হবে। বাঁধ ভেঙে আচমকা গ্রামে জল ঢুকে গেলে তখন অন্তত স্থানীয়দের উদ্ধার করে এনে এখানে আশ্রয় দেওয়া যাবে।’’ কেশপুরের গৌতম দোলুই, ডেবরার সহদেব সিংহ, সবংয়ের অনাদি বেরারা বলেন, “নদীতে জল বাড়তে থাকলেই কোথায় গিয়ে উঠবে ভেবে বুকে কাঁপুনি ধরে। সব সময় তো আর লোকের বাড়িতে ওঠা যায় না। প্রতি বছর বর্ষায় আতঙ্কে থাকতে কার ভাল লাগে। ফ্লাড শেল্টার হওয়ার ফলে সুবিধে হবে বলেই মনে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy