বেলপাহাড়িতে পুলিশের তল্লাশি। নিজস্ব চিত্র।
মাওবাদীদের ডাকা বন্ধ ও শীর্ষ মাওবাদী নেতা কিসেনজির মৃত্যুবার্ষিকী নজরে রেখে ঝাড়গ্রাম জেলায় 'হাই অ্যালার্ট' জারি করল পুলিশ। নজরদারির কৌশল বদলে ‘নাকা চেক পয়েন্ট’গুলিতে সাদা পোশাকে গোয়েন্দাদেরও ‘গোপন নজরদারি’ শুরু হয়েছে। ভিন্ রাজ্য থেকে চাষের কাজে কারা জেলায় আসছেন সেই তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রকাশ্যে এমন প্রস্তুতি ও নজরদারির বিষয়টি নিয়ে খোলসা করছেন না জেলার পুলিশ কর্তারা। তবে সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী শীর্ষনেতা ও সংগঠনের পলিটব্যুরো সদস্য কিসানদা ওরফে প্রশান্ত বসু সস্ত্রীক ধরা পড়ার পড়েই জেলায় নজরদারি বাড়ানো হয়। প্রশান্তের গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দেশ জুড়ে পাঁচদিনের প্রতিরোধ দিবসের ডাক দিয়েছে মাওবাদীরা। আগামী শনিবার, ২০ নভেম্বর মাওবাদীরা ২৪ ঘন্টা ভারত বনধেরও ডাক দিয়েছে। বিষয়টিকে মোটেই খাটো করে দেখতে রাজি নয় পুলিশ। এরপরই জেলার ন’টি থানায় হাইঅ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে খবর। বিশেষত বিনপুর, বেলপাহাড়ি, লালগড়, জামবনি ও নয়াগ্রাম থানাকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘জেলার সীমানাবর্তী এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। থানাগুলিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা আগেই সতর্কবার্তায় জানিয়েছিলেন, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার সীমানাবর্তী ঝাড়গ্রাম জেলার এলাকাগুলিতে মাওবাদীরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি লালগড়ে জনসাধারণ কমিটির প্রাক্তনীদের কাছ থেকে মাইন উদ্ধারের পরে তদন্তের সূত্রে পুলিশ জেনেছে, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা মাইন সংগ্রহ করেছিল। প্যাকেজ ও পুলিশে চাকরি না পেয়ে হতাশায় তারা এমন কাজ করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছে। ধৃতদের মধ্যে মূল অভিযুক্ত আবার শাসকদলের যুব নেতাও। এমন আবহে প্রশান্ত ধরার পড়ার পরে সিপিআই (মাওবাদী)-র পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র সঙ্কেত এক প্রেস বিবৃতিতে প্রতিরোধ দিবস ও বনধের ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, জঙ্গলমহলে এখন মাওবাদীদের জনভিত্তি তলানিতে ঠেকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখনও এলাকার অনুন্নয়ন ও পঞ্চায়েতের পরিষেবা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গলমহলের প্রান্তবাসীর মন পাওয়ার চেষ্টা করছে মাওবাদীরা।
মাওবাদী শীর্ষনেতা কিসেনজির মৃত্যুর দশম বর্ষ পূর্তি (২৪ নভেম্বর) উপলক্ষে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে অতিবাম সংগঠনটি। যদিও রাজ্য পুলিশের একাংশ বলছেন, প্রশান্ত বসু গ্রেফতারের পরে এই মুহূর্তে মাওবাদীদের পক্ষে বড় ধরনের হামলা-নাশকতা চালানোর মত পরিস্থিতি নেই। তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গেরিলা হামলার জন্য এক-দু’জনই যথেষ্ট। পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, বছর পনেরো আগে মাওবাদী সংগঠনের লোকজন ঝাড়খণ্ড থেকে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে খেতমজুর সেজে চাষের কাজ করার পাশাপাশি বাসিন্দাদের মধ্যে সংগঠনের প্রচার করেছিলেন। আসন্ন ধানকাটার মরসুমে লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকে খেতমজুররা বেলপাহাড়ি এলাকায় রুজির টানে আসেন। এছাড়া সীমানাবর্তী গ্রামের হাট গুলিতেও আসেন ঝাড়খণ্ডের ক্রেতা-বিক্রেতারাও। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাওবাদীদের লোকজনের ঢুকে পড়াটাও অসম্ভব কিছু নয় বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, ওই সব এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। কৌশলগত কারণে সীমানাবর্তী কয়েকটি এলাকায় প্রকাশ্যে নাকা-পুলিশের চেকিং পোস্টে চলছে সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy