আরাধনা: বরাবরই শিবভক্ত বাসব রামবাবু। ফাইল চিত্র
এক সময় সে ছিল রেলশহরের ত্রাস। নাম শুনলেই অনেকে সিঁটিয়ে যেতেন। খড়্গপুরের সেই রেলমাফিয়া বাসব রামবাবুর এখন গারদে দিন কাটছে পুজোপাঠ করেই। রেলশহরের আর এক মাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে দশ মাসেরও বেশি মেদিনীপুর জেলে রয়েছে খড়্গপুরের এক সময়ের এই ‘ডন’। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এই সময়ের মধ্যে রামবাবুর চেহারাও পাল্টেছে। আগের থেকে অনেক রোগা হয়ে গিয়েছে সে।
খুনের চেষ্টার মামলায় গ্রেফতার হয়ে মাস খানেক মেদিনীপুর জেলে ছিলেন কেশপুরের এক যুবক। মাস খানেক হল ছাড়া পেয়েছেন তিনি। জেলে থাকাকালীন রামবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। ওই যুবক বলেন, “একদিন জেল হাসপাতালে গিয়ে রামবাবুর সঙ্গে দেখা হয়। কোন এলাকা থেকে এসেছি, কী মামলায় এসেছি, সবই জানতে চেয়েছিল রামবাবু। আমার ধারণা ছিল, আমাকে বড়জোর ১৪ দিন জেলে থাকতে হবে। পরে মামলার ধারা শুনে রামবাবু বলে, জেল থেকে বেরোতে অন্তত ২৮ দিন লাগবে। শেষমেশ তাই হয়েছে।’’ ওই যুবকের কথায়, “পরে বুঝেছি, আইন-আদালত সম্পর্কে রামবাবুর ভাল ধারণা রয়েছে।’’
২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্ধ্রপ্রদেশের তানুকা থেকে রামবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুরুতে কয়েকদিন পুলিশ হেফাজতে ছিল সে। ৭ মার্চ থেকে তার মেদিনীপুর জেলে ঠাঁই হয়। মেদিনীপুর জেলের এক সূত্রে খবর, জেল হাসপাতালের ‘ফিভার ওয়ার্ড’-এ থাকে রামবাবু। এখানে শিবের ছবি রয়েছে। দিনের একটা বড় সময়ই শিবের ছবির সামনে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। কখনও ধ্যানমগ্ন অবস্থায়, কখনও আবার দেখা যায় আঙুল ছুঁয়ে জপ করতে। গোড়ায় সহবন্দিদের সঙ্গে তেমন কথা বলত না রামবাবু। বেশিরভাগ সময় একা-একাই থাকত। পরে ছবিটা বদলেছে। জেলের এক কর্তা মানছেন, “এখন পুজোপাঠের আগে-পরে অন্যদের সঙ্গে কথা বলে রামবাবু।’’
মেদিনীপুর জেলে আসার পরে একাধিক রোগে ভুগেছে রামবাবু। স্পন্ডেলাইটিস, হাইপ্রেশার-সহ শারীরিক সমস্যা ছিল তার। একটা সময় তেমন হাঁটাচলাও করতে পারত না। পুজোর সময়টুকু ছাড়া বিছানায় শুয়েই সময় কাটাত। জেলের এক সূত্রে খবর, শারীরিক পরিস্থিতি দেখে এক সময় রামবাবুকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে চেয়েছিলেন জেল হাসপাতালের এক চিকিত্সক। জেলের বন্দিরা মেডিক্যালে এলে ‘নকশাল কেবিন’- এ থাকে। রামবাবু অবশ্য মেডিক্যালে আসতে রাজি ছিল না। জেলের ওই চিকিৎসককে সে জানিয়ে দিয়েছিল, জেলের হাসপাতালেই তার চিকিত্সা চলুক। সে মেডিক্যালে যাবে না।
২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি খড়্গপুরের নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় তৃণমূলের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয় শ্রীনু নায়ডু। এই ঘটনার মূলচক্রী হিসেবে গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছে রামবাবু। রামবাবুর জেলযাত্রা অবশ্য এই প্রথম নয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “১৯৯৯ সালে মানস চৌবে যখন খুন হন, তখন রামবাবু ও তার কয়েকজন শাগরেদ গ্রেফতার হয়েছিল। ২০০১ সালে গৌতম চৌবে খুনের ঘটনাতেও রামবাবু ও তার সঙ্গীরা যুক্ত ছিল।’’ এই দু’টি খুনের মামলায় রামবাবু ও তার কয়েকজন সঙ্গীর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টে জামিন মেলে। ততদিনে অবশ্য এই রেলমাফিয়ার সাড়ে ৮ বছর জেল খাটা হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy