Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বুঁদ হয়ে চালকের আসনে, শুরু ধরপাকড়

৮ জুলাইয়ের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছিলেন দুর্ঘটনা মুক্ত রাজ্য চাই। এলাকাকে দুর্ঘটনা মুক্ত করতে পুলিশের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। তারপর থেকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ কর্মসূচির যাবতীয় নজর গিয়ে পড়েছে বাইক আরোহীদের উপর।

পরীক্ষা করা হচ্ছে এক গাড়ি চালককে। নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষা করা হচ্ছে এক গাড়ি চালককে। নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০১:৩২
Share: Save:

৮ জুলাইয়ের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছিলেন দুর্ঘটনা মুক্ত রাজ্য চাই। এলাকাকে দুর্ঘটনা মুক্ত করতে পুলিশের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। তারপর থেকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ কর্মসূচির যাবতীয় নজর গিয়ে পড়েছে বাইক আরোহীদের উপর। হেলমেট ব্যবহার নিয়ে কড়াক়ড়ি চলছে

রাজ্য জুড়ে।

কিন্তু শুধু হেলমেট নয়, ‘সেফ ড্রাইভে’র জন্য প্রয়োজন চালকের সুস্থতাও। মুখ্যমন্ত্রীর কড়াবার্তার পর নড়েচড়ে বসেলেও লাভ হয়নি। গত সোমবার, অর্থাৎ ১১ জুলাই তমলুক থানা এলাকায় ধরপাকড় চলে। ওই রাতে সোনাপেত্যায় হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে টোলপ্লাজার কাছে ব্রিদিং অ্যানালাইজার যন্ত্র নিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। শ্বাস পরীক্ষা করতে গিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যেই মদ্যপ অবস্থায় ধরা পড়েন দু’জন চালক। কিন্তু তারপর থেকে আর অভিযানই হয়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা জেলায় রয়েছে একটি মাত্র ব্রিদিং অ্যানালাইজার যন্ত্র। ফলে চাইলেও সর্বত্র একসঙ্গে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি প্রতি থানা এলাকাতেই যাতে পর্যাপ্ত যন্ত্র
পাওয়া যায়।’’

পুলিশেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে এক সময় বেশ কয়েকটি থানাকে ওই যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই যন্ত্রের ভিতরের থাকা ব্যাটারি দ্রুত খারাপ হয়ে যায় বলে তাঁদের অভিযোগ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্তা জানালেন, কোনও দিন ব্যবহারই হয় না ওই যন্ত্র। পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ব্যাটারি।

অথচ গভীর রাতের জাতীয় সড়কে যাদের রাজত্ব, তারা অধিকাংশই যে সুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালান না তা সকলেই জানেন। সন্ধ্যা নামার কিছু পরে গন্তব্যে যাওয়ার আগে ধাবায় খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়া। সুনসান ডবল লেনের সড়কে ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে মালবাহী লরি, ট্রাক, তেল বা গ্যাসের ট্যাঙ্কার। চালকের হাতের স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ হারালেই দুর্ঘটনা। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মেচেদাগামী বা কলকাতা থেকে মুম্বইগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে মালবাহী লরি, ট্যাঙ্কারদের দুর্ঘটনা ঘটে প্রায় প্রতিদিন। শিকার কখনও পথচারী, কখনও সাইকেল আরোহী, কখনও ছোট-বড় গাড়ি বা মোটর বাইক। এইসব দুর্ঘটনার পিছনে একটা বড় কারণ মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো। রাতের জাতীয় সড়কে অভিযানে নেমে প্রথম দিনেই তার প্রমাণ মিলেছে হাতেনাতে।

সোমবার সোনাপেত্যা টোলপ্লাজার কাছে গাড়ি চালকদের শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে গিয়ে মাত্র আধ ঘণ্টায় ধরা পড়েন দু’জন মদ্যপ গাড়ি চালক। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। ওই অভিযানের নেতৃত্ব থাকা জেলা ডিএসপি (ট্র্যাফিক) স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জেলার অন্যত্রও এই অভিযান চালানো হবে।’’ মোটরযান আইনের ২০২ ধারায় পুলিশ মদ্যপ চালককে গ্রেফতার করতে পারে। তার বিরুদ্ধে মোটরযান আইনের ১৮৫ ধারায় মামলা রজু হতে পারে। দোষী প্রমাণিত হলে জেল ও জরিমানা দুইই হতে পারে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে রয়েছে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল। হলদিয়া বন্দর, তেলশোধানাগার এবং বিভিন্ন কারখানা থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী লরি, তেল বা গ্যাসের ট্যাঙ্কার যাতায়াত করে বিভিন্ন রাজ্যে। কলকাতা থেকে মুম্বইগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়কেও প্রতিদিন পণ্যবাহী লরি, ট্যাঙ্কার যাতায়াত করে। তা ছাড়া, দিঘার দিকে প্রচুর যাত্রীবাহী গাড়ি যাতায়াত করে এই দুই জাতীয় সড়ক ধরে।

চালকদের জন্যই জাতীয় সড়কের ধারে ধারে রয়েছে বহু হোটেল ও ধাবা। অভিযোগ, ওই সব হোটেল, ধাবায় চাইলেই পাওয়া যায় মদ। অনেক চালক যাতায়াতের পথে ওখানেই সেরে নেন মদ্যপান। তারপর রাতের ফাঁকা রাস্তায় গতির ঝড় উঠে লরিতে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে আকছার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জাতীয় সড়কের ধারের হোটেল বা ধাবাগুলিতে মদ বিক্রির বন্ধ না-হলে এ জাতীয় অপরাধের বিরুদ্ধে রাশ টানা সম্ভব নয়। শুধু দুর্ঘটনা, নয় নানা অসামাজিক কাজেও প্রশ্রয় জোগায় অনেক ধাবা। তবে জেলা পুলিশ বলছে, বেআইনি মদ বিক্রির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়ে থাকে জাতীয় সড়কে। কিন্তু তাতে ভিন রাজ্য থেকে আসা গাড়ি চালকদের মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো আটকানো যাবে না।

তবে অবশেষে যে পুলিশ ন়ড়ে বসেছে সেটাই আশার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

safe drive checking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE