চন্দ্রকোনার লক্ষ্মীপুর হাইস্কুলে এখনও আছে মাটির ঘর। নিজস্ব চিত্র।
ঝুঁকির পাঠ!
কোথাও যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে স্কুলের কাঁচা বাড়ি আবার কোথাও এখনও বিদ্যুৎহীন স্কুল। অভিযোগ, বারবার আবেদন জানিয়েও স্কুল ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ মেলেনি। অগত্যা জীর্ণ ঘরেই প্রাণ হাতে নিয়ে পড়াশোনা করছে ছাত্রছাত্রীরা।
অভিযোগ, পক্ষপাতিত্বের ফলে কোনও কোনও স্কুল একাধিকবার ক্লাসঘর তৈরির জন্য অর্থ পেয়েছে। কখনও সর্বশিক্ষা দফতর থেকে, আবার কখনও সাংসদ তহবিল থেকে। আবার কোনও স্কুল বঞ্চিতই থেকে গিয়েছে।
সমস্যা দূর করতে জেলার কত স্কুলে মাটির শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তা জানতে সমীক্ষা শুরু করেছে জেলা পরিষদ। একইসঙ্গে কোন কোন স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও বিদ্যুৎহীন, তা জানতেও সমীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক সমীক্ষার পর জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় দেড়শোটি স্কুলে এখনও কিছু কাঁচা ক্লাসঘর রয়েছে। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, “কোনও স্কুল সম্পূর্ণ ভাবে কাঁচাবাড়িতে চলছে, এমনটা জেলায় নেই বললেই চলে। যদি থেকে থাকে সেগুলি দ্রুত পাকা করতে পদক্ষেপ করা হবে। তবে কয়েকটি স্কুলে পাকা বাড়ির পাশাপাশি দু’একটি ক্লাসঘর এখনও কাঁচা রয়েছে। সে গুলিও পাকা করার জন্যই এই সমীক্ষা।”
শালবনির ধান্যশোল যোগদা সৎসঙ্গ স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহ-শিক্ষকদের বসার ঘর ও কিছু ক্লাসঘর পাকা হয়েছে। তবে স্কুলের পাঁচটি ক্লাসঘর এখনও কাঁচা রয়ে গিয়েছে। কয়েকটি ক্লাসঘরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, ছাত্রছাত্রীদের বসানোর ঝুঁকি নেওয়া যায় না। সমস্যায় পড়তে হয় ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলকেই। এক একটি শ্রেণিতে ছাত্রসংখ্যা ৭০-৮০ জন। ছাত্রসংখ্যা বেশি হলে দু’টি বিভাগে ভাগ করার কথা। তা না হওয়ায় শিক্ষকদেরও যেমন চিৎকার করে পড়াতে হয়, তেমনই সব ছাত্রছাত্রী মন দিয়ে ক্লাস করছেন কিনা তাও দেখার সুযোগ কম। পিছনের সারিতে থাকা ছাত্রছাত্রীরা আবার সব সময় ভাল করে পড়া শুনতেও পায় না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপাল সাঁতরা বলেন, “নতুন শ্রেণিকক্ষ চেয়ে আবেদনও জানিয়েছি। টাকা না মেলায় করা যায়নি।”
চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের লক্ষ্মীপুর হাইস্কুলের দু’টি শ্রেণিকক্ষ এখনও কাঁচা। জীর্ণ ওই দু’টি ঘর এখন স্কুলের গুদাম। ঘরের অভাবে ছাত্রছাত্রী বেশি থাকলেও তাদের একাধিক বিভাগে ভেঙে দেওয়ার সুযোগ নেই। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি শঙ্কর চৌধুরীর কথায়, “দু’টি শ্রেণিকক্ষ না থাকায় সমস্যা বেড়েছে। একই ক্লাসে ৭০-৮০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ক্লাস করতে হয়। ফলে পিছনের সারিতে থাকা ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় ফাঁকি দিলেও দেখার সুযোগ হয় না।’’ তিনি বলেন, ‘‘একাধিক বিভাগে ভাগ করে দিলে একটি ক্লাসে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাবে। ফলে একটি শ্রেণির সব পড়ুয়ার উপর নজর রাখাও সম্ভব হবে।”
একইসঙ্গে স্কুলগুলিতে পানীয় জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে সমীক্ষায়। যদি কোনও স্কুলে এখনও বিদ্যুৎ, জল না থাকে, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে শিশুশিক্ষাকেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৯২৯টি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎহীন। পাখা না থাকায় গরমে যেমন কষ্ট হয়, তেমনই আলো না থাকায় বর্ষায় বৃষ্টির ছাঁট আটকাতে দরজা বন্ধ করলে অন্ধকারে পড়া যায় না। শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের কথায়, “অর্থ চাওয়ার জন্য যাতে একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা তৈরি করতে পারি, সেজন্যই এই সমীক্ষার উদ্যোগ। সমীক্ষা রিপোর্ট থাকলে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অর্থও দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগও করতে পারবে না যে, একটি প্রতিষ্ঠান বারবার সুযোগ পাচ্ছে, অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy