পাঠদান: এভাবেই। নিজস্ব চিত্র
খাতায় কলমে স্কুলের অস্তিত্ব রয়েছে। অথচ খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গেল স্কুলের কোনও বাড়িই নেই। খোলা আকাশের নীচেই বেঞ্চ পেতে বসে পড়ুয়ারা। ব্ল্যাক বোর্ডে পড়া বুঝিয়ে চলেছেন শিক্ষক।
কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের ঝাওয়া জুনিয়ার হাইস্কুলের (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি) এটাই ছবি। স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলেই জানালেন সারা বছর এ ভাবেই চলে পড়াশোনা। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল স্কুল। শুরু থেকেই এ ভাবেই চলে আসছে বলে জানালেন স্কুলের তিন শিক্ষক। তিনজনেই অতিথি শিক্ষক। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২ জন ছাত্রছাত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী যেখানে শিক্ষার জন্য সব রকম সুযোগসুবিধার কথা ঘোষণা করেছেন, সেখানে এই স্কুলের এমন অবস্থায় ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলেই হতাশ। পাশেই রয়েছে ঝাওয়া পঞ্চানন প্রাথমিক বিদ্যালয়। পানীয় জল থেকে শৌচাগার ব্যবহারে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ই ভরসা এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা?
শিক্ষকদের বক্তব্য, স্কুলের জন্য তাঁরা দেড় বছর ধরে বিডিও, মহকুমা শাসক থেকে জেলাশাসক, কাঁথি নতুন চক্রের স্কুল পরিদর্শক—সকলের কাছে দরবার করেছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।
শুধু ভবনের সমস্যাই নয়, গত দেড় বছরে মিড ডে মিলের টাকা পায়নি এই স্কুল। তবুও মিড ডে মিল বন্ধ হয়নি ছাত্রছাত্রীদের। কারণ স্কুলের তিন শিক্ষক নিজেদের উদ্যোগে তা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রীপতি কুমার সাহু বলেন, “মিড-ডে মিল চালু না রাখলে ছাত্রছাত্রীরা আসবে না। তা ছাড়া সব সমস্যা জানিয়ে দেড় বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এভাবে আর কতদিন চলবে জানি না।’’
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শুভদীপ ধাড়ার কথায়, “কোনও ছাউনি না থাকায় চড়া রোদে ক্লাস করতে হয়। আবার বৃষ্টি নামলে পড়া ফেলে ছুটে গিয়ে পাশের প্রাথমিক স্কুলের বারান্দায় ঢুকে গা বাঁচাতে হয়। এ ভাবে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।’’ ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তনুশ্রী প্রধানের কথায়, ‘‘স্কুলবাড়ি তো নেই-ই, একটা শৌচাগারও নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাদার ব্যবহার করতে আমাদের অসুবিধা হয়।’’
বিডিও মনোজ মল্লিক বলেন, ‘‘ওই স্কুলের আবেদন পেয়েছি। জেলাতে পাঠানো হয়েছে। তবে মিড ডে মিল কেন্দ্রের বিষয়।’’ জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, “ওই স্কুলের জন্য কোনও টাকা এখনও আসেনি। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’’
কাঁথি নতুন চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুব্রত জানা বলেন, ‘‘জেলার অনেক স্কুল আছে, যারা নানা কারণে তাদের বরাদ্দ খরচ করতে পারছে না। সেই টাকা যেসব স্কুল বরাদ্দ পায়নি তাদের দেওয়ার চেষ্টা করছে সর্বশিক্ষা দফতর। আর মিড-ডে মিল নিয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা হয়েছে। ওটা রাজ্য দেখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy