Advertisement
১৭ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

নন্দীগ্রামে সুফিয়ানকে টিকিট দিল না তৃণমূল, বুধ রাতে কুণালের হস্তক্ষেপে নাটকীয় প্রার্থীবদল

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সুফিয়ান এবং তাঁর অনুগামীদের সম্প্রতি অভিষেকের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।

TMC denied ticket to Nandigram leader Sheikh Sufian for WB panchayat election

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ ১০:৫৩
Share: Save:

নাটকীয় পটপরিবর্তন হল পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রামে শাসক তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায়। দলীয় কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভ সামাল দিতে বুধবার রাতে জেলা পরিষদের প্রার্থিতালিকা থেকে বাদ গেলেন জমি আন্দোলনের নেতা শেখ সুফিয়ান! জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতির বদলে জোড়াফুল প্রতীকে প্রার্থী করা হয়েছে স্থানীয় নেতা সামসুল ইসলামকে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা।

প্রার্থী বদলের ঘটনায় ক্ষুব্ধ সুফিয়ানকে ‘বুঝিয়ে’ নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা না-দেওয়ার জন্যও রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কো-অর্ডিনেটর কুণাল ঘোষ রাজি করিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাঁর অনুমোদন ক্রমেই বুধবার রাতে বিকল্প প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন কুণাল। বৃহস্পতিবার সেই প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় সেখানে থাকার কথা কুণালেরও।

বুধবার একটি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে হলদিয়া আদালতে কাটিয়েছিলেন সুফিয়ান। বৃহস্পতিবারই তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে তাঁর মনোনয়ন পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু টিকিট না পেলেও মনোনয়ন পেশ করবেন না তিনি। ‘নির্দল’ হিসাবে ভোটে লড়ার সম্ভাবনা খারিজ করে সুফিয়ান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলের এক জন সৈনিক। দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছি। টিকিট না পেলেও দলের কাজ করে যাব।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, পুরনো ব্লক কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গড়ার পর থেকেই নন্দীগ্রামে ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়েছিলেন ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট সুফিয়ান এবং তাঁর অনুগামীরা। সেই আবহে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থিতালিকাতেও সুফিয়ান এবং তাঁর গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা ছাঁটাই হচ্ছেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছিল।

কিন্তু মঙ্গলবার সুফিয়ান গোষ্ঠীর তরফে পঞ্চায়েতের তিন স্তরে ‘নির্দল’ প্রার্থী দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এর পরেই তড়িঘড়ি আসরে নামেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে হাজির হন কুণাল। দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকের পাশাপাশি সুফিয়ানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন তিনি।

কুণাল নন্দীগ্রাম ছাড়ার পরেই বুধবার জেলা পরিষদের আসনে সুফিয়ানের নাম প্রকাশ্যে আসে। তা জানাজানি হতেই পাল্টা প্রতিবাদে শামিল হন সুফিয়ানের বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা প্রার্থিতালিকা থেকে সুফিয়ানের নাম ছাঁটাইয়ের দাবিতে নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূলের দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেন। যা শাসকদলের নেতৃত্বের কাছে যথেষ্ট ‘অস্বস্তি’র। কারণ, নন্দীগ্রামে শাসক শিবিরের অন্দরে এই বিক্ষোভের ‘ফসল’ পক্ষান্তরে সেখানকার বিজেপি বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তুলবেন, এটাই স্বাভাবিক। বিক্ষোভকারী তৃণমূল কর্মী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘যে আসনে সুফিয়ানকে আনা হয়েছে, সেখানে সামসুল ইসলামকে দাঁড় করানোর কথা হয়েছিল। এই আসনে প্রার্থী নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ারে ভোটাভুটিতে সুফিয়ান পেয়েছিলেন ৭টি ভোট আর সামসুল পেয়েছিলেন ৭১টি ভোট। এর পরেও সুফিয়ানকে টিকিট দেওয়া হলে তা আমরা মানব না!’’

এই পরিস্থিতিতে আসরে নামেন কুণাল। তিনি রাতেই যান নন্দীগ্রামে। সেখানে তখন প্রবল বিক্ষোভ। সুফিয়ানের বিরুদ্ধে ব্যাপক স্লোগান চলছে। স্লোগান দেওয়া হচ্ছে দল এবং দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও। পুলিশের বারণ সত্ত্বেও পার্টি অফিস থেকে খানিক দূরেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সেখানে যান কুণাল। প্রথমেই জানিয়ে দেন, দফতরের তালা খুলতে হবে। তার পরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন ‘বিক্ষুব্ধ’ লোকজনের সঙ্গে। কুণালকে বোঝানো হয়, নন্দীগ্রামের তৃণমূলের কেউই চাইছেন না, সুফিয়ান প্রার্থী হন। সূত্রের খবর, কুণাল তখনই জানিয়ে দেন, দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। কিন্তু কেউ যেন দলবিরোধী স্লোগান না-দেন। পরে তিনি কথা বলেন মমতার সঙ্গেও এবং জানান, সুফিয়ানকে কেউ প্রার্থী হিসাবে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রার্থী বদল করাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। সেই অনুযায়ীই সামসুলের নাম ঠিক করা হয়।

নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ তথা তৃণমূল নেতা সবুজ প্রধান বলেন, ‘‘সুফিয়ানের এলাকার তৃণমূলের এক জন বুথ সভাপতিও তাঁকে প্রার্থী হিসাবে চাইছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে দল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।’’ তিনি জানান, সুফিয়ান-বিরোধী তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বুধবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ নন্দীগ্রামের দলীয় দফতর ছাড়েন কুণাল। তিনি কথা বলেন সুফিয়ান শিবিরের সঙ্গেও। জানান, সুফিয়ান প্রার্থী হচ্ছেন না। প্রার্থী হবেন সামসুল। বৃহস্পতিবার তিনি মনোনয়ন জমা দেবেন। সেখানে থাকার কথা কুণালেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE