Advertisement
২৮ মে ২০২৪
facebook post

Midnapore-TMC: কার্যালয় তৈরির কোটি টাকা কই, প্রশ্ন কর্মীরই

দলেরই এক সূত্রে খবর, বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একাধিক বিস্ফোরক পোস্ট করেন সঞ্জীবন দাস নামে ওই তৃণমূল কর্মী।

এই পোস্ট ঘিরেই শোরগোল।

এই পোস্ট ঘিরেই শোরগোল।

নিজস্ব সংবাদাদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ০৭:২০
Share: Save:

ফেসবুকে একাধিক পোস্ট তৃণমূলের এক কর্মীর। নিশানায় দলেরই কেউ কেউ। দলের জেলা কার্যালয় তৈরির জন্য সংগৃহীত কোটি টাকা কোথায় গেল, ঘুরিয়ে রয়েছে সেই প্রশ্নও।

ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সিবিআইয়ের হাতে ধৃত অনুব্রত মণ্ডল। এ সবের জেরে এমনিতেই অস্বস্তি রয়েছে। তার মধ্যে জেলার ওই দলীয় কর্মীর পোস্টে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি আরও বেড়েছে।

দলেরই এক সূত্রে খবর, বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একাধিক বিস্ফোরক পোস্ট করেন সঞ্জীবন দাস নামে ওই তৃণমূল কর্মী। একটি পোস্টে লেখা ছিল, ‘তখন অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা। জেলা পার্টি অফিস করার জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে তোলা হয়েছিল। সে টাকা কোথায় গেল, জবাব চাইছে সাধারণ কর্মীরা।’ আরেকটি পোস্টে লেখা, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির অফিস না তৈরি হলে আমি শ্বেতপত্র প্রকাশ করব। কার পকেটে টাকাটা আছে জানাব।’

জেলায় তৃণমূলের অন্দরে সঞ্জীবনের পরিচিতি সঞ্জু নামে। এক সময়ে শালবনির সাতপাটি অঞ্চলের দলীয় সভাপতি ছিলেন। মেদিনীপুরের প্রয়াত বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। জেলা কার্যালয় তৈরির জন্য একাধিক দফায় যে টাকা সংগৃহীত হয়েছিল, তার কী হল, টাকা কোথায় রয়েছে, কার কাছে রয়েছে, এ প্রশ্ন তৃণমূলের অন্দরে আগেও উঠেছে। একাংশ কর্মীর মতে, সঞ্জু তাঁর পোস্টে তাঁদের মনের কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য দেখা যায়, ওই সংক্রান্ত পোস্ট ডিলিট করা হয়েছে। কেন কারও চাপে? সঞ্জীবনের দাবি, ‘‘আমি এমন কিছু পোস্ট করিনি। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল।’’

রাজ্যের তিন দফায় ক্ষমতায় দল। অথচ, পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের স্থায়ী ঠিকানা নেই এখনও। দলের জেলা কার্যালয় তৈরির জন্য ২০১৩ সালে কেনা জমি পড়েই রয়েছে। মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে ওই জমিতে আগাছা জন্মেছে। অথচ রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ, জেলায় দলের সংগঠনের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হবে সদর কার্যালয় থেকেই। জেলা পার্টি অফিসে প্রতি ১৫ দিন অন্তর বৈঠক করবেন দলের জেলা সভাপতি, জেলা চেয়ারম্যান, কোর কমিটির সদস্যরা। নিজস্ব কার্যালয় না থাকায় জেলা তৃণমূলের বৈঠক কখনও শহরের ফেডারেশন হলে, তো কখনও জেলা পরিষদের হলে হয়েছে।

প্রায় ২,৮০০ বর্গফুট জমিতে দলের জেলা কার্যালয় তৈরির জন্য একবার চাঁদা তুলেছিল তৃণমূল। একবার চাঁদা তুলেছিল যুব তৃণমূলও। অভিযোগ, সেই সব টাকার না কি কোনও হিসাবই নেই। দলের এক সূত্রের দাবি, জমি কিনতে এবং দলিল করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা।

সুজয় হাজরা দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হওয়ার পর নান্নুরচকের কাছে এক কার্যালয় হয়েছে অস্থায়ীভাবে। এখন দলের জেলার বৈঠক এখানেও হয়। দলীয় কর্মীর ওই পোস্ট নিয়ে মন্তব্য এড়িয়েছেন জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সুজয়ের দাবি, ‘‘আমি ওই পোস্ট দেখিনি।’’ একই দাবি দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়েরও। দীনেন যখন দলের জেলা সভাপতি ছিল, তখনই জমিটি কেনা হয়েছিল। এক সময়ে দলের অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের সভাপতির দায়িত্বে থাকা, বর্তমানে দলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতিও বলেন, ‘‘এমন কোনও পোস্ট আমি দেখিনি।’’

গত বছর রথের দিনে ভিতপুজো হয়েছিল। তারপরে একটা ইটও গাঁথা হয়নি। ২০১৩ থেকে আজ ২০২২—জমি থাকা সত্ত্বেও ন’বছরে কার্যালয় গড়ে উঠল না? অজিতের জবাব, ‘‘এ বার আমরা দলীয় কার্যালয় তৈরির জন্য মনোনিবেশ করব।’’ দীনেনেরও আশ্বাস, ‘‘ফের উদ্যোগী হব সকলে মিলে।’’ কিন্তু আগের সংগৃহীত টাকার জমা-খরচের হিসেব কার কাছে আছে? সে প্রশ্নেই আপাতত তোলপাড় জেলা তৃণমূলের অন্দর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

facebook post midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE