Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘিরে পর্যটন প্রকল্প থমকে

জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রাম শহর ঘিরে নানা পর্যটন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে এসে এখানকার রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে সরকারি পর্যটন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে গিয়েছেন। কিন্তু সে প্রকল্প কাজ থমকে গিয়েছে। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দফতর অর্থ বরাদ্দ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আর্জি জানিয়েছে প্রশাসনের উপর মহলে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পূর্ত সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকও করেন।

অর্থ ও নিরাপত্তার অভাব। বন্ধ অতিথি নিবাসের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

অর্থ ও নিরাপত্তার অভাব। বন্ধ অতিথি নিবাসের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

অশোক সেনগুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র ঝাড়গ্রাম শহর ঘিরে নানা পর্যটন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে এসে এখানকার রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে সরকারি পর্যটন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে গিয়েছেন। কিন্তু সে প্রকল্প কাজ থমকে গিয়েছে। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দফতর অর্থ বরাদ্দ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার আর্জি জানিয়েছে প্রশাসনের উপর মহলে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পূর্ত সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকও করেন।

কলকাতা থেকে সড়ক পথে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার ও ট্রেনে ১৪০ কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রাম। ১৭ একর জায়গার উপর রয়েছে পেল্লায় রাজবাড়ি। বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজবাড়িতে অতিথিশালা চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম। স্থানীয় পুরসভা দীর্ঘ দিন সিপিএম নিয়ন্ত্রিত থাকলেও গত বছর পুরভোটে সেখানে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। পুরপ্রধান হন রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র দুর্গেশ মল্লদেব। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সামনে পর্যটন প্রকল্প গড়ে তোলার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন ২০১১ সালের ১৬ অক্টোবর। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির অভ্যন্তরীণ পর্যটন আবাসে পর্যাপ্ত সাড়া মিলেছে আশপাশে সাবিত্রী মন্দির, চিল্কিগড় রাজবাড়ি, কনকদুর্গা মন্দির, রামেশ্বর মন্দির, হাতি বাড়ি, মুকুটমণিপুর প্রভৃতি দর্শনীয় জিনিস থাকায়। ঝাড়গ্রাম ও সংলগ্ন অঞ্চলে মাওবাদী তত্‌পরতা দমন করার পর পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে পারে অনুমান করে রাজবাড়ি-সংলগ্ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবা য়িত করার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পের ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ বিজ্ঞাপিত হয় ২০১২-র ১১ জুন। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪-র শেষে। তদারকির জন্য তৈরি হয় পাঁচ সদস্যের কমিটি। কমিটির অন্যতম সদস্য দুর্গেশবাবু বলেন, ‘‘পর্যটন নিগমের সঙ্গে মউ সই হয়েছে ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। জলাশয়টিকে ঘিরে ২০টি কুটির হবে। এ বছরেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’

এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রকল্পের কাজ প্রায় বন্ধ। যে জলা কেন্দ্র করে কাজ, তা সংস্কার হয়নি। দু’টি ঘাট ঝোপে ভরা। ১৬টি অতিথি কুটির হচ্ছে। ১১টি-তে দুই শয্যার দু’টি করে ঘর। ৫টি বড় কুটিেরর কাজও বাকি। অসম্পূর্ণ ওভারহেড জলাধারের কাজ।

কেন এই হাল? পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এর আংশিক কারণ, অর্থাভাব। আংশিক কারণ, নিরাপত্তার অভাব।’’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি জানান, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কাজ হয়েছে ৫ কোটি টাকার। দ্বিতীয় পর্যায়ে হবে ভিতরের রাস্তা, জলাশয় সংস্কার, সৌন্দর্যায়ন। এই কাজ আগামী মার্চ মাসের মধ্যে শেষ করার কথা। পূর্ত দফতর আরও পাঁচ কোটি চেয়েছে পর্যটন দফতরে। টাকা এলে ফের কাজ শুরু হবে।

প্রথম পর্যায়ে কুটিরগুলোর কাজ শেষ হল না কেন? পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা জানান, কুটিরের মূল কাজ আপাতত শেষ। এর পর বিদ্যুৎ ও জলের সংযোগের কাজ হচ্ছিল। কিন্তু নিঝুম এলাকা বলে সে সব চুরি হয়ে যাচ্ছে। পুলিশি নজরদারি বাড়াতে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে আর্জি জানিয়েছে আঞ্চলিক পূর্ত দফতর।

দ্বিতীয় পর্যায়ে টাকা কবে মঞ্জুর হবে? উত্তরে পর্যটন দফতরের এক আধিকারিক জানান, ইঞ্জিনিয়ারেরা যে টাকা চেয়েছেন তা কমানোর আর্জি জানানো হয়েছে। ইটের দেওয়ালের বদলে কাঁটা তারের সীমানা দিতে বলা হয়েছে। ওই তারে গুল্ম জড়িয়ে প্রকৃতি-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে। ইঞ্জিনিয়াররা জানালেন, নির্মীয়মাণ প্রকল্পে ওভারহেড বিদ্যুত্‌ সংযোগ পেতে সময় লাগছে। স্বাস্থ্যের নিরিখে নিকটবর্তী খাল ঢেকে দেওয়ার প্রস্তাবও করেছেন নির্মাতারা। পর্যটন কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘বিদ্যুত্‌ দফতরকে বলা হয়েছে দ্রুত সংযোগ দিতে। এ ছাড়া, আমরা কংক্রিটের জঙ্গল করতে চাই না। নিকাশি ঠিকমতো হলে স্বাস্থ্য বা পরিবেশ নিয়ে ভয় থাকবে না।’’

পূর্তসচিব দাবি করেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। আগামী শীতেই ভ্রমণপিয়াসীর মানচিত্রে যুক্ত হবে আরও একটা আকর্ষণীয় স্থান।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE