সৈকতে রাখা ওয়াটার স্পোর্টসে ব্যবহৃত বোট। নিজস্ব চিত্র
দু’একদিনের টানা ছুটি মানেই পর্যটকের ভিড় দিঘায়। গত সপ্তাহন্ত এবং সোমবার ছিল স্বাধীনতা দিবসের ছুটি। তার আগে শনি ও রবিবার পর্যটকেরা ভিড় করেছিলেন দিঘায়। হোটেল ব্যবসায়ী থেকে দোকানদার, সৈকতের ধারে পসরা সাজিয়ে বসা পসারি আর পর্যটকের জন্য সমুদ্রবক্ষে অ্যাডভেঞ্চারের উপকরণ নিয়ে থাকা ব্যবসায়ীদেরও এর ফলে রমরমা। কিন্তু এ সবের ফাঁক গিয়ে পর্যটকদের সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অনেক সময় নজর এড়িয়ে যায়। যা দেখা গেল গত কয়েকদিনে।
দিঘায় সমুদ্র স্নানের পাশাপাশি স্পিড বোট, জেট-স্কি’র মতো জলযানে সমুদ্রে ঘুরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই সব বিনোদনমূলক জলযান আদৌ সুরক্ষিত নয় বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী পর্যটকদের একাংশ। ওই সব জলযানে পর্যটকদের মাঝ দরিয়া ঘুরিয়ে ফের সৈকতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার মতো পরিকাঠামো যথাযথ রয়েছে কি না সে সম্পর্কেও প্রশাসনের তরফে কোনও নজরদারি নেই বললেই চলে।
স্বাধীনতা দিবসের ছুটি উপলক্ষে শনিবার মন্দারমণি এসেছিলেন উল্টোডাঙ্গার এক চিকিৎসক। স্পিড বোটে চেপে সপরিবার ঘুরতে গিয়েছিলেন সমুদ্রবক্ষে। চিকিৎসকের স্ত্রী’র কথায়, ‘‘একটা স্পিডবোটে পাঁচজন সমুদ্রে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সঙ্গে আমার ৬ বছরের ছেলেও ছিল। সি-বিচ থেকে দু’কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে আচমকা স্পিড বোটের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। বোটের চালক কিংবা আমাদের কারও কাছেই যোগাযোগ করার মতো মোবাইল ফোন ছিল না। শুধুমাত্র যে লাইফ জ্যাকেট পরেছিলাম সেটাই খুলে উপরে নাড়িয়ে নিজেদের বিপদের কথা সৈকতে থাকা লোকেদের জানানোর চেষ্টা করছিলাম।’’
একই বোটেই ছিলেন কলকাতার লেকটাউনের এক বাসিন্দা। তাঁর দাবি, ‘‘১২ মিনিট ঘোরানোর কথা বলা হয়েছিল। সমুদ্রে বোটের ইঞ্জিন যখন বিকল হয়, তখন ভাটা চলছে। সমুদ্রে কোথায় ভেসে যাচ্ছি বুঝতে পারিনি। শুধুমাত্র একটা বড় সেতু দেখতে পেলাম। সওয়া এক ঘণ্টা ধরে এভাবে ভেসেছি। পরে বোটের চালক জানালেন আমরা তাজপুরে। সন্ধ্যা নাগাদ দিঘা বা শঙ্করপুরে ভেসে ভেসে পৌঁছব।’’ তিনি জানান, দেরি দেখে পরিজন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সংস্থাকে চাপ দেয়। এর পরে তারা আর একটি জেট স্কি নিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্থ স্পিডবোটটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফিরিয়ে আনে।
প্রসঙ্গত, দিঘা এবং মন্দারমণিতে এরকমই বেশ কিছু আডভেঞ্চার স্পোটর্স চালু রয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য শুধুমাত্র লাইফ জ্যাকেট সম্বল। কমপক্ষে তিন থেকে চার রকমের অনুমতি থাকলে তবেই দিঘা কিংবা মন্দারমণিতে এ ধরনের জলযান চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ কর্তৃপক্ষ এই অনুমতি দেয় বলে রামনগর-২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তথাগত গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক পর্যটকের অভিযোগ, ‘‘জলযানগুলির ইঞ্জিন বিকল হতেই পারে। কিন্তু সেই বিপদ অন্যদের জানানোর মতো বন্দোবস্ত থাকে না। প্রশাসনের নজরদারিও দেখা যায় না। প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলেও সব জেনেও পুলিশ এবং সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঠুঁটো জগন্নাথ।’’
যদিও এ ধরনের বিনোদনমূলক জলযান মূলত দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে মন্দারমণি উপকূল থানার পুলিশের দাবি। যে সব স্পিডবোট চালানো হচ্ছে তার গায়ে কিংবা ব্যবহৃত লাইফ জ্যাকেটে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন দফতরের নাম উল্লেখ রয়েছে। তা সত্ত্বেও ওইসব জলযান নিয়ে প্রশাসনের গা ছাড়া মনোভাবের কারণে আগামী দিনে বড় রকমের দুর্ঘটনার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে রামনগর-২ ব্লকের বিডিও বিপ্রতীক বসাক বলেন, ‘‘এ ধরনের জলযানগুলির অনুমোদন দেয় ডিএসডিএ কর্তৃপক্ষ। তবে সমুদ্রে গিয়ে পর্যটকদের যে অসুবিধা হয়েছে সেই ঘটনা আমাদের কাছে অজানা। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব।’’
ডিএসডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাই কয়েকটি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কেউ নিয়ম ভেঙে কারবার চালাচ্ছে কিনা খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে অনুমোদন বাতিল করা হবে।’’ তিনি জানান, সমুদ্রে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে সেই পর্যটককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য ওই সব সংস্থাকে ওয়াকিটকি কিংবা উদ্ধারকারী বোট তৈরি রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy